তানভীর খালেক
‘মোহাব্বত জিন্দেগি হ্যায়’, ‘ইয়ে দুনিয়া হ্যায় পেয়ারে’সহ অসংখ্য গজলে কণ্ঠ দিয়ে গজলকে ভিন্ন একটি উচ্চতায় নিয়ে গেছেন যে শিল্পী, তিনি মেহদি হাসান। উপমহাদেশে তাঁর পরিচিতি ‘গজলসম্রাট’ হিসেবেই। দীর্ঘ পাঁচ দশকের সংগীত জীবনে উর্দু, বাংলা, পাঞ্জাবি ও আফগান ভাষায় ২০ হাজারেরও বেশি গানে কণ্ঠ দিয়েছেন গুণী এ শিল্পী। ফুসফুস, কিডনির সমস্যাসহ প্রায় এক যুগ নানা রোগে ভুগে ১৩ জুন বুধবার শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন উপমহাদেশের প্রখ্যাত এ গজলশিল্পী।
১৯২৭ সালে অবিভক্ত ভারতে জন্ম গ্রহণ করেছিলেন মেহদি হাসান খান। রাজস্থানের লুনা গ্রামে জন্ম নেওয়া মেহদি হাসানের বাবা ওস্তাদ আজিম খান এবং চাচা ওস্তাদ ইসমাইল খান ছিলেন ধ্রুপদী সংগীতশিল্পী। সংগীত পরিবারে জন্ম নেওয়ায় শিশুকালেই সংগীতে হাতেখড়ি হয় মেহদি হাসানের।
১৯৪৮ সালে ভারত ভাগের পর মেহদি হাসান সপরিবারে পাকিস্তান চলে যান। সেখানে যাওয়ার পর দারিদ্র্য এসে ভর করে তাঁদের পরিবারে। আর্থিক সংকটের কারণে তাঁদের জীবনধারণ বেশ কঠিন হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় বাইসাইকেলের দোকানে কাজ নেন তরুণ মেহদি হাসান। পরে অটো মেকানিক হিসেবে কাজ শুরু করেন। ‘মেহদি হাসান: দ্য ম্যান অ্যান্ড হিজ মিউজিক’ বইয়ে পাকিস্তানি লেখক আসিফ নূরানি লিখেছেন, ‘তরুণ বয়সে গাড়ি সারাই করে জীবিকা নির্বাহ করেছেন মেহদি হাসান। তারকাখ্যাতি পাওয়ার পর একবার তাঁর হারমোনিয়াম ভেঙে গেলে তিনি নিজেই সেটা ঠিক করতে বসে যান। এটা দেখে তাঁর আশপাশের সবাই অবাক হয়ে গেলে তিনি জানান, অতীতে জটিল যেসব কল-কব্জা তিনি সারাই করেছেন সেগুলোর তুলনায় হারমোনিয়াম কিছুই না।’ স্মিতভাষী ও বিনয়ী মেহদি হাসানের প্রশংসা করে লেখক আসিফ নূরানি বলেছেন, খ্যাতির শীর্ষবিন্দু স্পর্শ করলেও কখনোই তাঁর বিনয়কে ছাপিয়ে যেতে পারেনি তারকাখ্যাতি।
জীবনধারণের জন্য রীতিমতো যুদ্ধ করতে হলেও নিয়মিতভাবে সংগীতের চর্চা চালিয়ে গেছেন মেহদি হাসান। শত কাজের মধ্যেও ঠিকই সময় বের করে গানের রেওয়াজ করেছেন। তাঁর ধৈর্য ও কষ্টসহিষ্ণুতা ঠিকই একটা সময়ে ফল বয়ে আনে। ১৯৫৭ সালে রেডিও পাকিস্তান থেকে গান গাওয়ার আমন্ত্রণ পান। ঠুমরি গান দিয়ে যাত্রা শুরু করেন তিনি। পরে আত্মপ্রকাশ করেন গজলশিল্পী হিসেবে। সে-ই শুরু। আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে। স্বতন্ত্র গায়কী ঢং তারকাখ্যাতি এনে দেয় মেধাবী এই শিল্পীকে।
মেহদি হাসান পাকিস্তানি চলচ্চিত্রে প্লেব্যাকও করেছেন। পাকিস্তানি চলচ্চিত্রের সংগীতে মুকুটবিহিন সম্রাট হিসেবেও তিনি বিবেচিত। ‘কেহনা উসে’, ‘সুর কি কোয়ি সীমা নেহি’, ‘নাজরানা’সহ অন্তত ২৫টি অডিও অ্যালবাম প্রকাশ করেছেন। তাঁর কণ্ঠের যাদু কেবল পাকিস্তানের সীমানাতেই আবদ্ধ থাকেনি, ভারতেও সমান জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। পাকিস্তানি গজলশিল্পীদের মধ্যে তিনি ছিলেন অন্যতম, যিনি ভারতীয় শ্রোতাদের সুরের মাধুর্যে বিমোহিত করেছেন। তাঁর গানের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন ভারতীয় ধ্রুপদী সংগীতের বোদ্ধারাও। তাঁর একনিষ্ঠ ভক্তের তালিকায় রয়েছেন ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারি বাজপায়ি, সংগীতশিল্পী লতা মঙ্গেশকর প্রমুখ। মেহদি হাসানের কণ্ঠকে ‘ঈশ্বরের কণ্ঠ’ বলেও অভিহিত করেছিলেন লতা।
কাজের স্বীকৃতি হিসেবে জীবদ্দশায় অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন গজলের এই পুরোধা ব্যক্তিত্ব। নিজ দেশ থেকে ‘তমঘা-ই-ইমতিয়াজ’, ‘হিলাল-ই-ইমতিয়াজ’, ‘প্রাইড অব পারফর্মেন্স’ সম্মাননাসহ নেপাল সরকারের ‘গোরখা দক্ষিণা বাহু’ এবং ভারতের সায়গল পুরস্কারও পেয়েছেন মেহদি হাসান।
ঐতিহ্য অনুযায়ী ঠুমরির মতো করেই গজল গাওয়া হতো। কিন্তু মেহদি হাসানই প্রথম সেই প্রথাকে ভেঙে ধ্রুপদ, খেয়াল ও রাজস্থানি ফোক-সংগীতের মিশেলে গজল গাওয়া শুরু করেন। ষাট থেকে আশির দশকের শেষ পর্যন্ত অসাধারণ গায়কী দিয়ে তিনি জয় করেছেন অগণিত শ্রোতার মন। কিন্তু আশির দশকের শেষ দিকে এসে শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে ধীরে ধীরে গান থেকে নিজেকে সরিয়ে নিতে বাধ্য হন কিংবদন্তি এই শিল্পী। দুবার বিয়ে করেছিলেন তিনি। দুই স্ত্রী গত হয়েছেন আগেই। মেহদি হাসান নয় ছেলে ও পাঁচ মেয়ের জনক
১৯২৭ সালে অবিভক্ত ভারতে জন্ম গ্রহণ করেছিলেন মেহদি হাসান খান। রাজস্থানের লুনা গ্রামে জন্ম নেওয়া মেহদি হাসানের বাবা ওস্তাদ আজিম খান এবং চাচা ওস্তাদ ইসমাইল খান ছিলেন ধ্রুপদী সংগীতশিল্পী। সংগীত পরিবারে জন্ম নেওয়ায় শিশুকালেই সংগীতে হাতেখড়ি হয় মেহদি হাসানের।
১৯৪৮ সালে ভারত ভাগের পর মেহদি হাসান সপরিবারে পাকিস্তান চলে যান। সেখানে যাওয়ার পর দারিদ্র্য এসে ভর করে তাঁদের পরিবারে। আর্থিক সংকটের কারণে তাঁদের জীবনধারণ বেশ কঠিন হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় বাইসাইকেলের দোকানে কাজ নেন তরুণ মেহদি হাসান। পরে অটো মেকানিক হিসেবে কাজ শুরু করেন। ‘মেহদি হাসান: দ্য ম্যান অ্যান্ড হিজ মিউজিক’ বইয়ে পাকিস্তানি লেখক আসিফ নূরানি লিখেছেন, ‘তরুণ বয়সে গাড়ি সারাই করে জীবিকা নির্বাহ করেছেন মেহদি হাসান। তারকাখ্যাতি পাওয়ার পর একবার তাঁর হারমোনিয়াম ভেঙে গেলে তিনি নিজেই সেটা ঠিক করতে বসে যান। এটা দেখে তাঁর আশপাশের সবাই অবাক হয়ে গেলে তিনি জানান, অতীতে জটিল যেসব কল-কব্জা তিনি সারাই করেছেন সেগুলোর তুলনায় হারমোনিয়াম কিছুই না।’ স্মিতভাষী ও বিনয়ী মেহদি হাসানের প্রশংসা করে লেখক আসিফ নূরানি বলেছেন, খ্যাতির শীর্ষবিন্দু স্পর্শ করলেও কখনোই তাঁর বিনয়কে ছাপিয়ে যেতে পারেনি তারকাখ্যাতি।
জীবনধারণের জন্য রীতিমতো যুদ্ধ করতে হলেও নিয়মিতভাবে সংগীতের চর্চা চালিয়ে গেছেন মেহদি হাসান। শত কাজের মধ্যেও ঠিকই সময় বের করে গানের রেওয়াজ করেছেন। তাঁর ধৈর্য ও কষ্টসহিষ্ণুতা ঠিকই একটা সময়ে ফল বয়ে আনে। ১৯৫৭ সালে রেডিও পাকিস্তান থেকে গান গাওয়ার আমন্ত্রণ পান। ঠুমরি গান দিয়ে যাত্রা শুরু করেন তিনি। পরে আত্মপ্রকাশ করেন গজলশিল্পী হিসেবে। সে-ই শুরু। আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে। স্বতন্ত্র গায়কী ঢং তারকাখ্যাতি এনে দেয় মেধাবী এই শিল্পীকে।
মেহদি হাসান পাকিস্তানি চলচ্চিত্রে প্লেব্যাকও করেছেন। পাকিস্তানি চলচ্চিত্রের সংগীতে মুকুটবিহিন সম্রাট হিসেবেও তিনি বিবেচিত। ‘কেহনা উসে’, ‘সুর কি কোয়ি সীমা নেহি’, ‘নাজরানা’সহ অন্তত ২৫টি অডিও অ্যালবাম প্রকাশ করেছেন। তাঁর কণ্ঠের যাদু কেবল পাকিস্তানের সীমানাতেই আবদ্ধ থাকেনি, ভারতেও সমান জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। পাকিস্তানি গজলশিল্পীদের মধ্যে তিনি ছিলেন অন্যতম, যিনি ভারতীয় শ্রোতাদের সুরের মাধুর্যে বিমোহিত করেছেন। তাঁর গানের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন ভারতীয় ধ্রুপদী সংগীতের বোদ্ধারাও। তাঁর একনিষ্ঠ ভক্তের তালিকায় রয়েছেন ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারি বাজপায়ি, সংগীতশিল্পী লতা মঙ্গেশকর প্রমুখ। মেহদি হাসানের কণ্ঠকে ‘ঈশ্বরের কণ্ঠ’ বলেও অভিহিত করেছিলেন লতা।
কাজের স্বীকৃতি হিসেবে জীবদ্দশায় অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন গজলের এই পুরোধা ব্যক্তিত্ব। নিজ দেশ থেকে ‘তমঘা-ই-ইমতিয়াজ’, ‘হিলাল-ই-ইমতিয়াজ’, ‘প্রাইড অব পারফর্মেন্স’ সম্মাননাসহ নেপাল সরকারের ‘গোরখা দক্ষিণা বাহু’ এবং ভারতের সায়গল পুরস্কারও পেয়েছেন মেহদি হাসান।
ঐতিহ্য অনুযায়ী ঠুমরির মতো করেই গজল গাওয়া হতো। কিন্তু মেহদি হাসানই প্রথম সেই প্রথাকে ভেঙে ধ্রুপদ, খেয়াল ও রাজস্থানি ফোক-সংগীতের মিশেলে গজল গাওয়া শুরু করেন। ষাট থেকে আশির দশকের শেষ পর্যন্ত অসাধারণ গায়কী দিয়ে তিনি জয় করেছেন অগণিত শ্রোতার মন। কিন্তু আশির দশকের শেষ দিকে এসে শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে ধীরে ধীরে গান থেকে নিজেকে সরিয়ে নিতে বাধ্য হন কিংবদন্তি এই শিল্পী। দুবার বিয়ে করেছিলেন তিনি। দুই স্ত্রী গত হয়েছেন আগেই। মেহদি হাসান নয় ছেলে ও পাঁচ মেয়ের জনক
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন