বুধবার, ২০ জুন, ২০১২

রথযাত্রা : ইতিবৃত্ত ও তাৎপর্য



॥ পলাশ কুমার রায় ॥

প্রতি বছর আষাঢ় মাসে জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। রথযাত্রাকে কেন্দ্র করে অনেক মন্দিরে মেলা বসে। বাংলাদেশের বড় রথযাত্রাটি হয় ঢাকার ধামরাইয়ে শ্রীশ্রী যশোমাধব মন্দির থেকে। প্রায় ৩০০ বছরের পুরনো এই মন্দিরে রয়েছে যশোমাধবের বিগ্রহ। ওই সময়কার জমিদার যশোরাজ পাল বিগ্রহটিকে মন্দিরে স্থাপন করেন। তার পর থেকে এই মন্দিরে নিয়মিত শ্রীশ্রী যশোমাধবের পূজার্চনা হয়ে থাকে। ভগবান জগন্নাথদেব হলেন শ্রীকৃষ্ণ স্বয়ং, যিনি জগতের নাথ বা জগদীশ্বর রূপে প্রকাশিত।
বৃন্দাবন ত্যাগ করে মহারাজ নন্দসূত শ্রীকৃষ্ণ তার দ্বারকালীলায় রত হলেন। সূর্যগ্রহণ উপলক্ষে শ্রীকৃষ্ণ যখন কুরুক্ষেত্রে যান, তখন তার জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা বলরাম ও ভগিনী সুভদ্রা এবং দ্বারকা থেকে অনেকেই তার সাথে গিয়েছিলেন। সেই সময় ব্রজবাসীও সূর্যগ্রহণ উপলক্ষে কুরুক্ষেত্রে গিয়েছিলেন। কুরুক্ষেত্রে বৃন্দাবনের গোপ-গোপীদের সাথে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সাক্ষাৎ হলো। ব্রজবাসী ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে তার বাল্যলীলাস্থল বৃন্দাবনে ফিরিয়ে নিতে চেয়েছিলেন। তারা তাকে রাজবেশে দেখতে চাইলেন না। তারা শ্রীকৃষ্ণকে বৃন্দাবনে ফিরিয়ে নিয়ে ব্রজের বেশে দেখতে চাইলেন এবং তার সাহচর্য পেতে উন্মুখ হলেন। তখন ব্রজবাসী কৃষ্ণ, বলরাম ও সুভদ্রা দেবীর রথের ঘোড়া ছেড়ে দিয়ে নিজেরাই রথ টানতে টানতে বৃন্দাবনে নিয়ে গেলেন। সে ঘটনা স্মরণ করে ভক্তরা আজো পুরীর জগন্নাথ মন্দির থেকে ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে রথে টেনে বৃন্দাবনে নিয়ে যান। দ্বারকা রাজ্য যেমন শ্রীকৃষ্ণের ঐশ্বর্যলীলার স্থান, বৃন্দাবন তেমনি মাধুর্যলীলার স্থল। 
রথযাত্রার উৎসবে অংশ নেয়ার মানে হলো আত্মোপলব্ধির পথে এক ধাপ অগ্রসর হওয়া। রথযাত্রা শ্রীকৃষ্ণের অন্যতম লীলা। হিন্দুধর্মের বিশ্বাসমতে, এই উৎসবে অংশ নেয়ার অর্থ হলো সরাসরি কৃষ্ণের সংস্পর্শে আসা। যারা মন্দিরে এসে ভগবানকে দর্শন করেন না, তাদেরকে দর্শন দেয়ার জন্য ভগবান জগন্নাথদেব ভক্ত পরিবেষ্টিত হয়ে নিজেই পথে বের হন। রথোপরি ভগবান জগন্নাথ দেবের একবার দর্শনেই জন্ম-মৃত্যুর পুনরাবর্তন রোধে অগ্রগতি লাভ হয়। কেউ যদি রথের রশি ধরে টানে বা রথ স্পর্শ করে অথবা রথোপবিষ্ট বিগ্রহকে দর্শন করে, তাহলে তার মুক্তি সুনিশ্চিত। এই জন্ম-মৃত্যুর চক্র থেকে অব্যাহতি লাভ করতে হৃদয়ে অবস্থিত সুপ্ত কৃষ্ণভক্তিকে পুনর্জাগ্রত করতে হবে। 
আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সঙ্ঘ (ইস্কন)-এর প্রতিষ্ঠাতা শ্রীকৃষ্ণের একজন শুদ্ধ ভক্ত হিসেবে পৃথিবীর প্রায় সব নগর-গ্রামে রথযাত্রা উৎসব পৌঁছে দিয়েছেন। লন্ডন, প্যারিস, নিউ ইয়র্ক, সানফ্রান্সিসকো, সিডনিসহ বিশ্বের অনেক স্থানে রথযাত্রা উৎসব উদ্যাপিত হচ্ছে।
আজ ঢাকার স্বামীবাগ ইসকন মন্দির থেকে বিকেল ৪টায় রথ শোভাযাত্রা শুরু হয়ে তা ঢাকেশ্বরী মন্দিরে গিয়ে শেষ হবে। সপ্তাহান্তে উল্টো রথযাত্রা ইসকন মন্দিরে গিয়ে শেষ হবে। এবারের রথযাত্রায় লাখো মানুষের সমাগম হবে মর্মে আয়োজকেরা জানান। এই উৎসব ও শান্তিপূর্ণ শোভাযাত্রা সাফল্যমণ্ডিত হোক, এই প্রার্থনা। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ আমাদের সবার পাপ-পঙ্কিলতা ক্ষমা করুন, দেশের অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ দূর করে শাসকগোষ্ঠীর হৃদয় কোমলকরত ন্যায়ানুগ পদ্ধতিতে দেশ পরিচালনার শক্তি ও ধৈর্য দিন, আমাদের আদর্শ নাগরিক হওয়ার মানসিকতা তৈয়ার করে দিন, আজকের দিনে এই শুভ প্রার্থনা করি মহান স্রষ্টার কাছে। 
লেখক : আইনজীবী, ঢাকা 
palashroy2012@yahoo.com

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন