শুক্রবার, ২২ জুন, ২০১২

হাতি আসুক রোহিঙ্গা খেদাও


হা সা ন হা ফি জ

শহরে বিদ্যুত্ নেই। বর্ষাকালেও ভ্যাপসা গরমে জান কাহিল। অতএব, ঘুরে আসা যাক বনাঞ্চল থেকে। কথাই আছে—জঙ্গল মে মঙ্গল হ্যায়। অরণ্যের নিবিড় নিভৃতি বড়ই নিরিবিলি। মানুষ হচ্ছে জগতের সবচেয়ে খতরনাক প্রাণী। বনের বাঘারা (মাসুম বাচ্চা হওয়া সত্ত্বেও) পর্যন্ত শান্তিতে থাকতে পারছে না এদের জ্বালায়। টেনেহিঁচড়ে নিয়ে আসা হচ্ছে শাহরিক পরিবেশে। পাচার করলে উমদা লাভ।
আমাদের এবারের গল্প বনাঞ্চল নিয়ে। তবে বাঘ বর্জিত। পুরানকালে নাটকে নারী চরিত্র বলতে গেলে থাকতই না। দু-চারটি থাকলেও অভিনয় করতেন পুরুষরা। নারী চরিত্র বর্জিত নাটকের চাহিদা ছিল বেশি। আজকের নাট্যাংশে ব্যাঘ্রদের ঠাঁই নেই। নির্জলা গাছগাছড়া নিয়ে কায়-কারবার। কোনো কোনো দুর্মুখের মধ্যে খারাপ কিছু দেখবেন। তা দেখুন। আমরা মচকাব না। লাইক মহাজোট সরকার। আমরা ইতিবাচক অংশেই ঘুরপাক খেতে থাকব। আমরা বনের বারোটা বাজানো প্রকল্পের পক্ষে। জোরালো সব যুক্তি তুলে ধরব। মামলা না জিতার কোনো রাস্তাই নাই।
কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলা। বারবাকিয়া সংরক্ষিত বনাঞ্চল। সেখানে চলছে বনদখলের মহোত্সব। আইনে বসতি গড়ার ওপর কড়া নিষেধাজ্ঞা আছে। থাকুক। কে তোয়াক্কা করে। মাস তিনেক সময়েই বনের চিত্র পাল্টে গেছে। দিন বদলের তুফান বইছে না? বনাঞ্চল তো দেশের বাইরে নয়। ঝড়ঝাপটা তার গায়েও লাগবে। তিন মাসে এক হাজার ৩১২টি বাড়িঘর নির্মিত। আরও এক হাজার নির্মাণের প্রক্রিয়াধীন। মাশাআল্লাহ্। চমত্কার প্রবৃদ্ধি। ডাবল ডিজিট। এ প্রকল্প তো অর্থমন্ত্রী আবুল মাল অভিহিত ‘দুষ্টু শেয়ারবাজার’ না। এটা হলো “মিষ্টি দখলের প্রকল্প। ‘ইহা’ অনুসরণীয় মডেল।”
তিন দখলদার জানিয়েছেন, সংশ্লিষ্ট বন বিটের কর্মকর্তাকে মোটা উেকাচ দিয়ে তারা বনভূমি দখলে নেন। তারপর বাড়ি তৈরি। এই প্যাকেজের অনুঘটক এক মালি। তিনি বন বিটের লোক। এক বিট কর্মকর্তা মওকা দিচ্ছেন বনভূমি দখলের। মাগনা নয়। নীতি হচ্ছে ‘ফ্যালো কড়ি মাখো তেল’। পাঁচ থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত মালপানি খসালেই ব্যস। কাম সারা। গত ২৩ মে বড়ছড়া এলাকায় সংঘটিত ঘটনা বড়ই লজ্জার, নিন্দনীয়ও বটে। অবৈধ বসতি স্থাপনকারীদের কাছে একজন মাসোয়ারা তুলতে গিয়েছিলেন। রাশি খারাপ ছিল। মাসোয়ারা তো পানইনি, উল্টো গণপিটুনিতে সিধা হতে হয়েছে। কলিকাল আর কাকে বলে! রাবিশ!!
সেই বিট কর্মকর্তাকে ধরেছিলেন সাংবাদিকরা। যথারীতি অস্বীকার করলেন তিনি। নিয়মই তাই। বললেন, সংঘবদ্ধভাবে কিছু লোক বন দখল করেছে। তৈরি করছে বাড়িঘর। লোকবলের সঙ্কট আছে। সে কারণে এদের উচ্ছেদ করা যাচ্ছে না। বিট কর্মকর্তার এই বক্তব্য/দাবি কতটা ন্যায্য, আমরা জানি না। সময়ে প্রমাণিত হবে। মহাস্বপ্নিল পদ্মা সেতু নিয়ে পানি ঘোলা কম হয়নি। বিশ্বব্যাংকের অভিযোগ দুর্নীতির। বাংলাদেশ সরকার সেই অভিযোগ প্রবলভাবে অস্বীকার করেছে। তারস্বরে প্রতিবাদ। শেষতক কী দাঁড়াল? যাহা রটে তাহা বটে। এক্ষণে ‘থলের বিড়াল’ বের হতে শুরু করেছে। কালা না ধলা বিড়াল, সেইটা অবশ্য বলা মুশকিল। লেটেস্ট খবর : পদ্মা সেতু প্রকল্পে চার কোটি ৭০ লাখ ডলার বরাদ্দ ছিল পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের জন্য। এ নিয়েই কালো বিড়ালের লাফঝাঁপ। পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের কাজ পাইয়ে দেয়ার জন্য কানাডাভিত্তিক প্রতিষ্ঠানকে টার্গেট করা হয়। এসএনসি—লাভালিন সেই প্রতিষ্ঠানের নাম। ১০ শতাংশ অর্থ কমিশন চাওয়া হয় তাদের কাছে। চাইলেন কারা? যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ তিন কর্মকর্তা। সাবেক মন্ত্রীও আছেন।
পদ্মা সেতু রাজকীয় ব্যাপার। চুনোপুঁটিদের বিষয় না। আপাতত বন-জঙ্গল নিয়েই থাকি। বনখেকোদের সপক্ষে আছেন। যুক্তি খাড়া করণের চেষ্টা করা যাক। সেই যুক্তি খোঁড়া হবে, সন্দেহ নাই। হোক না! নাই মামার চেয়ে কানা মামা ভালো। মাজুল কতিপয় যুক্তি এখানে দাঁড় করানোর (বাঁশ দিয়ে ঠেকনা মার্কা) অপচেষ্টা। বন দখলদাররা বেশ করেছে। তাদের ‘অবৈধ’ বলাটা ভালো দেখায় না। শরম লাগে। ছয় ঘোড়াঅলা মইনুদ্দিন, মার্কিন সিটিজেন ফখরুদ্দীনের তথাকথিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার কি অবৈধ? সেটা তো বর্তমান সরকার বলে না। শরমায়। কানাকে কানা বলতে হয় না। দুঃসাহস করে বলে ফেললে মহাবিপদ। ১১ হাজার ভোল্ট। কান টানলে মাথা চলে আসে যে!
আজাইড়া বনপ্রেমিক হয়ে লাভ কী? ওতে কি দুটো পয়সা আসে পকেটে? জাতীয় আবাসন সঙ্কট প্রকট হয়ে উঠছে দিন দিন। হাজার হাজার বাড়িঘর লাগবে। হলে বহু লোকজনের মাথা গোঁজার ঠাঁই হবে। তারা বন-জঙ্গল কেটেকুটে সাফ করবে। সবজি আনাজ ফসল লাগাবে। সমৃদ্ধ হবে কৃষি খাত। বনের হিংস্র জীবজন্তু মেরে কেটে জনজীবনের নিরাপত্তা দেবে। বেহুদা জীব-জানোয়ার বাঁচিয়ে লাভ কী? তারা মানুষখেকো। অন্য প্রাণীও উদরস্থ করে। বাঘে মানুষ খায়, জখম করে। বন্য হাতির গোদা পায়ের পাছড়া-পাছড়িতে পাবলিক অতিষ্ঠ। এরাও কিন্তু খুনি। মানুষ মেরে ক্ষান্তি। ফি-বছর ফসল নষ্ট করে এন্তার। এসব দর্পিত ঐরাবত আমদানি হয় আমাদের পিয়ারের দোস্ত ইন্ডিয়ার অভ্যন্তর থেকে। বিনা ভিসায়, বিনা পাসপোর্টে। ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ আমাদের কিশোরী ফেলানীকে গুলি করে মেরে ফেলে। ঝুলিয়ে রাখে কাঁটাতারে। বিএসএফ কিন্তু মারকুটে হাতি বাহিনীকে আটকায় না। সেই মুরোদও অবশ্য নাই ওদের। বাংলাদেশ আজ বিপন্ন আর্ত রোহিঙ্গা মুসলমানদের ঠেকিয়ে দিচ্ছে। পুশ ব্যাক করছে। যারা ঠেকাচ্ছে, তারা কিন্তু দাদা দেশের বন্য হাতি দেখলে লেজ গুটিয়ে পালায়। কী বৈপরীত্য সেলুকাস!
hasanhafiz51@gmail.com

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন