আশীষ-উর-রহমান | তারিখ: ২৫-০৯-২০১০
শিশিরভেজা ভোর বললে যেমন মনে হয়, তেমন নয়। শরতে শিশির ঝরারই কথা। কিন্তু এবার শরতের শেষ প্রান্তেও শিশিরের বদলে বৃষ্টিই ঝরছে প্রায় বর্ষার মতো। চারপাশটা বৃষ্টিতেই ভেজা থাকে প্রায়ই। মেঘলা আকাশ আর বৃষ্টি দিয়েও শুরু হয় কোনো কোনো দিন। গতকাল শুক্রবার অবশ্য সে রকম ঝঞ্ঝাট ছিল না। সকাল শিশিরসিক্ত না হলেও ছিল শরতের শিউলি, ছিল কাশফুল। তা-ই দিয়ে অতিথি, অভ্যাগতদের বরণ করে নিয়ে শুরু হয়েছিল শরৎ-উৎসব; সঙ্গে মিলিত কণ্ঠের গান, ‘আজ নতুন আলোয় নতুন দিনের গান...।’
ছুটির দিনে ঢাকা শহরের ঘুম তখনো ভালো করে ভাঙেনি। পথ ছিল ফাঁকা। টিএসসিতে তারুণ্যের আড্ডা জমতে ঢের দেরি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরের গাছগাছালির মাথায় তখন সূর্যকিরণের স্পর্শ। পক্ষীকুল অবশ্য ততক্ষণে সকলরবে বেরিয়ে পড়েছে খাবারের খোঁজে। কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের পাশের সবুজ চত্বরে চলছে শরৎ-উৎসব শুরুর প্রস্তুতি। বিদ্যুৎ সরবরাহ না থাকায় খানিকটা বিলম্ব। যথেষ্টসংখ্যক শ্রোতার সমাগম ঘটে গেছে মঞ্চের সামনে। অপেক্ষার পালা অবশ্য দীর্ঘ হলো না। সত্যেন সেন শিল্পী সংস্থার আয়োজনে সংগীতে, নৃত্যে সরব হয়ে উঠল শরৎ-উৎসবের মঞ্চ।
প্রথমে ছিল আলোচনা। উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক ও চ্যানেল আইয়ের বার্তাপ্রধান শাইখ সিরাজ উৎসবের উদ্বোধন করেন। উপাচার্য বললেন, ‘রবীন্দ্রনাথের হাত ধরেই আমরা ঋতুভিত্তিক অসাম্প্রদায়িক উৎসবগুলো পেয়েছি। এসব উৎসব আমাদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির কাছে পৌঁছে দেয়। নতুন প্রজন্মকে আপন ঠিকানার অন্বেষী করে তুলতে তাদের এসব উৎসবের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে হবে।’ অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন সত্যেন সেন শিল্পী সংস্থার সভাপতি হায়াৎ মামুদ, অধ্যাপক আবদুল মান্নান চৌধুরী, নাট্যব্যক্তিত্ব আলী যাকের, গোলাম কুদ্দুছ ও মানজারুল ইসলাম চৌধুরী।
সুরসপ্তকের শিল্পীদের দলীয় সংগীত দিয়ে শুরু হয়েছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পর্ব। এরপর শিল্পী ফেরদৌস আরা গেয়ে শোনান ‘চাঁদের কন্যা চাঁদ সুলতানা’। সারা দিনের আয়োজন; সকালের পর্বে ছিল একক ও দলীয় সংগীত, নৃত্য আর আবৃত্তি। নীল আকাশজুড়ে পেঁজা পেঁজা সাদা মেঘ, আর নিচে শিউলি, শাপলা ও কাশফুলে শুভ্র হয়ে উঠেছিল বাংলার প্রকৃতি। সেই নৈসর্গিক রূপবন্দনাই ছিল উৎসবের সংগীতে, নৃত্যে। মঞ্চও সাজানো হয়েছিল মেঘ আর কাশফুলের ছবি দিয়ে। সব মিলিয়ে শরতের মতো উৎসবেও ছিল স্নিগ্ধ পরিবেশ।
রবিরাগের শিল্পীরা গেয়ে শোনান, ‘শেফালী বনের মনের কামনা’। লিলি ইসলাম পরিবেশন করেন, ‘তোমরা যা বলো তাই বলো’। ‘অমল ধবল পালে লেগেছে’ গানের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করেন নৃত্যমের শিল্পীরা। মিতা হক গেয়ে শোনান, ‘আমার রাত পোহালো শারদ প্রাতে’। শফিউল আলম পরিবেশন করেন ভাওয়াইয়া, ‘বন্ধু তোমার কিবা হয়েছে রে’। ‘দেখো দেখো শুকতারা আঁখি মেলে চায়’ গানের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করেন সুকন্যার শিল্পীরা। সত্যেন সেন শিল্পী সংস্থার শিল্পীরা পরিবেশন করেন, ‘আজ ধানের ক্ষেতে রৌদ্রছায়ায় লুকোচুরি খেলা।’ লায়লা আফরোজ আবৃত্তি করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘উদ্বোধন’। এভাবেই সংগীতে-নৃত্যে এগিয়েছে অনুষ্ঠান। প্রভাতি অধিবেশনে আরও ছিল উত্তরায়ণ ও বহ্নিশিখার দলীয় সংগীত, পদক্ষেপ নৃত্যশিল্পী সংস্থার নৃত্য, মাফিয়া রহমান, নারগিস চৌধুরী ও শহীদ খানের একক সংগীত।
বিকেলের অধিবেশনে গ্রন্থাগার চত্বর লোকসমাগমে ভর্তি। ছুটির দিনে বেড়াতে আসা নাগরিকদের অনেকেই সপরিবারে শামিল হয়েছিল শরৎ উৎসবে। পড়ন্ত বেলায় সঞ্জয় রায়ের গাওয়া, ‘জাগো, নতুন প্রভাত জাগো, সময় হলো...অন্তরে অন্তরে দাও আলো দাও/কালিমা কলুষ যত মুছে দিয়ে যাও’ গানটি দিয়ে শুরু হয়েছিল আনুষ্ঠানিকতা। জাতীয় কবিতা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আসলাম সানী অংশ নেন শারদ-কথনে। ঋষিজের শিল্পীরা পরিবেশন করেন, ‘আমার দেশের মাটির গন্ধে’। একক কণ্ঠে রিপন গেয়ে শোনান, ‘আজ শরতের কাশের বনে হাওয়ার লুটোপুটি’। এ পর্বেও ছিল একক ও দলীয় গান ও আবৃত্তি। শিল্পী সাজেদ আকবর, সালাহউদ্দিন আহমদ, মৃদুল কান্তি চক্রবর্তী, মাহজাবিন রহমান, রুপু মজুমদার পরিবেশন করেন একক কণ্ঠের গান। দলীয় সংগীতে ছিল ধ্রুবতান, স্বভূমি ও সত্যেন সেন শিল্পী সংস্থা এবং আবৃত্তিতে ঢাকা স্বরকল্পন ও প্রকাশ। শুরুর মতো দিনের শেষটিও ছিল বৃষ্টিবিহীন, ফুরফুরে হাওয়ায় কোমল মনোরম। উৎসব নির্বিঘ্ন হয়ে উঠেছিল তাতে।
ছুটির দিনে ঢাকা শহরের ঘুম তখনো ভালো করে ভাঙেনি। পথ ছিল ফাঁকা। টিএসসিতে তারুণ্যের আড্ডা জমতে ঢের দেরি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরের গাছগাছালির মাথায় তখন সূর্যকিরণের স্পর্শ। পক্ষীকুল অবশ্য ততক্ষণে সকলরবে বেরিয়ে পড়েছে খাবারের খোঁজে। কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের পাশের সবুজ চত্বরে চলছে শরৎ-উৎসব শুরুর প্রস্তুতি। বিদ্যুৎ সরবরাহ না থাকায় খানিকটা বিলম্ব। যথেষ্টসংখ্যক শ্রোতার সমাগম ঘটে গেছে মঞ্চের সামনে। অপেক্ষার পালা অবশ্য দীর্ঘ হলো না। সত্যেন সেন শিল্পী সংস্থার আয়োজনে সংগীতে, নৃত্যে সরব হয়ে উঠল শরৎ-উৎসবের মঞ্চ।
প্রথমে ছিল আলোচনা। উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক ও চ্যানেল আইয়ের বার্তাপ্রধান শাইখ সিরাজ উৎসবের উদ্বোধন করেন। উপাচার্য বললেন, ‘রবীন্দ্রনাথের হাত ধরেই আমরা ঋতুভিত্তিক অসাম্প্রদায়িক উৎসবগুলো পেয়েছি। এসব উৎসব আমাদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির কাছে পৌঁছে দেয়। নতুন প্রজন্মকে আপন ঠিকানার অন্বেষী করে তুলতে তাদের এসব উৎসবের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে হবে।’ অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন সত্যেন সেন শিল্পী সংস্থার সভাপতি হায়াৎ মামুদ, অধ্যাপক আবদুল মান্নান চৌধুরী, নাট্যব্যক্তিত্ব আলী যাকের, গোলাম কুদ্দুছ ও মানজারুল ইসলাম চৌধুরী।
সুরসপ্তকের শিল্পীদের দলীয় সংগীত দিয়ে শুরু হয়েছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পর্ব। এরপর শিল্পী ফেরদৌস আরা গেয়ে শোনান ‘চাঁদের কন্যা চাঁদ সুলতানা’। সারা দিনের আয়োজন; সকালের পর্বে ছিল একক ও দলীয় সংগীত, নৃত্য আর আবৃত্তি। নীল আকাশজুড়ে পেঁজা পেঁজা সাদা মেঘ, আর নিচে শিউলি, শাপলা ও কাশফুলে শুভ্র হয়ে উঠেছিল বাংলার প্রকৃতি। সেই নৈসর্গিক রূপবন্দনাই ছিল উৎসবের সংগীতে, নৃত্যে। মঞ্চও সাজানো হয়েছিল মেঘ আর কাশফুলের ছবি দিয়ে। সব মিলিয়ে শরতের মতো উৎসবেও ছিল স্নিগ্ধ পরিবেশ।
রবিরাগের শিল্পীরা গেয়ে শোনান, ‘শেফালী বনের মনের কামনা’। লিলি ইসলাম পরিবেশন করেন, ‘তোমরা যা বলো তাই বলো’। ‘অমল ধবল পালে লেগেছে’ গানের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করেন নৃত্যমের শিল্পীরা। মিতা হক গেয়ে শোনান, ‘আমার রাত পোহালো শারদ প্রাতে’। শফিউল আলম পরিবেশন করেন ভাওয়াইয়া, ‘বন্ধু তোমার কিবা হয়েছে রে’। ‘দেখো দেখো শুকতারা আঁখি মেলে চায়’ গানের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করেন সুকন্যার শিল্পীরা। সত্যেন সেন শিল্পী সংস্থার শিল্পীরা পরিবেশন করেন, ‘আজ ধানের ক্ষেতে রৌদ্রছায়ায় লুকোচুরি খেলা।’ লায়লা আফরোজ আবৃত্তি করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘উদ্বোধন’। এভাবেই সংগীতে-নৃত্যে এগিয়েছে অনুষ্ঠান। প্রভাতি অধিবেশনে আরও ছিল উত্তরায়ণ ও বহ্নিশিখার দলীয় সংগীত, পদক্ষেপ নৃত্যশিল্পী সংস্থার নৃত্য, মাফিয়া রহমান, নারগিস চৌধুরী ও শহীদ খানের একক সংগীত।
বিকেলের অধিবেশনে গ্রন্থাগার চত্বর লোকসমাগমে ভর্তি। ছুটির দিনে বেড়াতে আসা নাগরিকদের অনেকেই সপরিবারে শামিল হয়েছিল শরৎ উৎসবে। পড়ন্ত বেলায় সঞ্জয় রায়ের গাওয়া, ‘জাগো, নতুন প্রভাত জাগো, সময় হলো...অন্তরে অন্তরে দাও আলো দাও/কালিমা কলুষ যত মুছে দিয়ে যাও’ গানটি দিয়ে শুরু হয়েছিল আনুষ্ঠানিকতা। জাতীয় কবিতা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আসলাম সানী অংশ নেন শারদ-কথনে। ঋষিজের শিল্পীরা পরিবেশন করেন, ‘আমার দেশের মাটির গন্ধে’। একক কণ্ঠে রিপন গেয়ে শোনান, ‘আজ শরতের কাশের বনে হাওয়ার লুটোপুটি’। এ পর্বেও ছিল একক ও দলীয় গান ও আবৃত্তি। শিল্পী সাজেদ আকবর, সালাহউদ্দিন আহমদ, মৃদুল কান্তি চক্রবর্তী, মাহজাবিন রহমান, রুপু মজুমদার পরিবেশন করেন একক কণ্ঠের গান। দলীয় সংগীতে ছিল ধ্রুবতান, স্বভূমি ও সত্যেন সেন শিল্পী সংস্থা এবং আবৃত্তিতে ঢাকা স্বরকল্পন ও প্রকাশ। শুরুর মতো দিনের শেষটিও ছিল বৃষ্টিবিহীন, ফুরফুরে হাওয়ায় কোমল মনোরম। উৎসব নির্বিঘ্ন হয়ে উঠেছিল তাতে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন