মুস্তাফা জামান আব্বাসী | তারিখ: ০৪-০৯-২০১১
অধ্যাপক মুহম্মদ মনসুরউদ্দীন থাকতেন শান্তিনগরে। তাঁর পাশের বাড়িতে বাস করেন এক ভদ্রলোক, আমারই বয়সী। সকাল সাতটার দিকে শান্তিনগর মোড়ে গিয়ে খবরের কাগজ পড়ে আসা তাঁর নিত্য-অভ্যাস। প্রিয় নিশীথ সূর্যের অপরূপ কান্তি নিয়ে উদ্ভাসিত শান্তির নিবাস নরওয়েতে অশান্তির ছায়া নেমেছে। বোমার আঘাতে ৮০ জনের জীবনপ্রদীপ নির্বাপিত। বেশ কিছুদিন আগে ২২ জুলাইয়ের খবর। অসলোর কাছেই লেবার পার্টির ইয়ুথ ক্যাম্পে অ্যান্ডার্স বেহরিং ব্রেভিক নামের ৩২ বছরের এক যুবক কাণ্ডটি ঘটিয়েছেন।
নরওয়ে পৃথিবীর শান্তিপ্রিয় দেশগুলোর একটি, যার লোকসংগীত ও সাহিত্যের বিরাট ভান্ডার। লোক-ঐতিহ্যে ভরপুর নরওয়ের কথা প্রথম শুনি অধ্যাপক মনসুরউদ্দীনের কাছে। তাঁর বাড়িতে নরওয়ে থেকে আসা নামকরা ফোকলোর স্পেশালিস্টের সম্মানে দুপুরবেলার ভোজ। সস্ত্রীক আমাকে এবং আরও কয়েকজন ফোকলোরিস্টকে দাওয়াত করেছিলেন। খালি গলায় গানও শোনাতে হয়েছিল। ফোকলোরিস্টের কাছে শুনেছিলাম লোক-ঐতিহ্য ও লোকসংগীত সে দেশের সরকার নিজেরাই সংরক্ষণ করে থাকে। আধুনিক নরওয়ের সংস্কৃতি মানে উনিশ শতক থেকে প্রবাহিত জাতীয় রোমান্টিসিজম, যার ভিত্তি লোক-ঐতিহ্য। এই প্রবাহে সৃষ্ট নানা শিল্পসম্ভার ইউরোপে সমাদৃত।
পৃথিবী-বিখ্যাত কম্পোজার এডওয়ার্ড গ্রেগ ওয়ার্ল্ড কম্পোজার্স ইউনিয়নে, যার সঙ্গে ভিয়েনায় আমার দেখা। পাশেই গল্প করছিলেন বিখ্যাত রবিশংকর ও বেহালাবাদক ইয়াহুদি মেনুহিন। বিশ্ব যাঁদের চেনে তাঁরা হলেন চিত্রশিল্পী জোয়ান ক্রিস্টান ডা’ল, নাট্যকার হেনরি ইবসেন, লেখক নুট হ্যামসুন, ভাস্কর গুসতাব ভিগেল্যান্ড। ইবসেনের নাটক অভিনীত হয় বাংলাদেশের মঞ্চগুলোতে। সাহিত্যে যাঁরা নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন বার্নস্টার্ন ব্রেনসন, নুট হ্যামসন ও সিগরিট আন্ডসেট।
সমুদ্রে, ট্রেনে, মোটরে করে পর্যটকেরা আসেন নিশীথ সূর্য দেখতে, পৃথিবীর বিস্ময়। কীভাবে সূর্য জেগে থাকে চাঁদের মতো দিনের পর দিন, রাতের পর রাত। ছবি তোলেন দিনরাত, ইন্টারনেটে প্রত্যক্ষ করি, একটির চেয়ে আরেকটি সুন্দর। সে দেশের সাজানো-গোছানো শহরগুলো শব্দহীন শান্ত সুন্দর, সমুদ্রের পাশে ফিওর্ডের পাশেই ছবির মতো জেগে আছে যেন। পর্যটকদের দিবারাত্রি হাতছানি দেয়, বলে—এসো, পৃথিবীর অপরূপ দেশে যেখানে আছে নিরবচ্ছিন্ন শান্তি।
পশ্চিমে নরওয়েজিয়ান সমুদ্র, ফিওর্ডের কোল ঘেঁষে কুড়িটি শহর। অসলো সুইডেনের বর্ডার ঘেঁষে, নর্থ সি থেকে বাল্টিক সাগরের মধ্য দিয়ে জাহাজগুলো সেখানে প্রবেশ করে। নরওয়ে, সুইডেন, ফিনল্যান্ড পাশাপাশি তিনটি দেশ, একই রকম। বাল্টিক সাগরের দক্ষিণে গিয়েছিলাম এস্তোনিয়ায়, সেটিও লোকসংগীত ও লোকসংস্কৃতির দেশ। নরওয়ের জাতীয় সংগীত ভালো লেগেছিল, কারণ গানটি গাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রতি মানুষ জেগে ওঠে ভালোবাসায় আপ্লুত হয়ে। জিজ্ঞেস করায় বললেন, লোকসংগীতের আদি সুরে শান্তির প্রতি অঙ্গীকার, মানুষের প্রতি ভালোবাসা। জাতীয় সংগীত গাওয়ার সময় প্রতি রোমকূপ জেগে ওঠার কথা।
দেশের অর্ধেক মানুষ ‘স্কি হাটে’ যেতে পারে, কেবিনে ও বোটে করে জীবনকে উপভোগ করতে পারে। তারা উদ্গ্রীব, কীভাবে অন্য প্রান্তের মানুষকে কাছে টানা যায়, কীভাবে সংস্কৃতির সঙ্গে করাবে পরিচয়। এরা সুখী, সমৃদ্ধ ও উন্নত। নরওয়েজিয়ান অপেরা সরকারি আনুকূল্যে দিনের পর দিন মোহনীয়, ইউরোপের নানা রূপকথার মোহনীয় বিস্তার।
এখানে বলি আমার একটি স্বপ্নের কথা, যা বলেছি জসীমউদ্দীন, জয়নুল আবেদিন ও মনসুরউদ্দীনকে। হয়নি। তা হলেও বলি: শ্রেষ্ঠ রূপকথাগুলো নিয়ে আমাদের শিল্পীরা তৈরি করবে শ্রেষ্ঠ অপেরা, অভিনীত হবে স্বপ্নের সোনারগাঁয়ে [‘আমার কোন কূলে আজ ভিড়ল তরী, এ কোন সোনারগাঁয়’: নজরুল], যেখানে আজ লোকশিল্প জাদুঘর গড়ে উঠেছে। অপেরায় থাকবে রামায়ণ, মহাভারত, মৈমনসিংহ গীতিকা, পূর্ববঙ্গ গীতিকা, তেমনি মধ্যপ্রাচ্যের আলিফ লায়লা, সোহরাব-রুস্তম, আলীবাবা, সিন্দাবাদ থেকে শুরু করে নেটিভ আমেরিকান, লাতিন আমেরিকান, আফ্রিকান, জাপান ও চীনের রূপকথা। স্বপ্নের বিবরণ শুনে চমকে উঠেছিলেন রবিশংকর। বলেছিলেন, একমাত্র বাংলাদেশই তা পারবে, কারণ তোমরা নতুন জাতি, তোমাদের মধ্যে প্রবাহিত সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য ধারা, যা একই সঙ্গে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক। কথাটি ভুলিনি।
দুঃখভারাক্রান্ত হূদয়ে নরওয়েজিয়ান ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্সের সিনিয়র রিসার্চার জ্যাকব গদিজমিসকি বলেছেন, এই অশান্তির উৎস ইসলামি জঙ্গিবাদ উদ্ভূত নয়, এর উদ্গাতা দক্ষিণপন্থী যুদ্ধবাদীরা, তুলনীয় ওকলাহোমা সিটি বম্বিং। মার্কিন স্পেশালিস্ট উইল ম্যাকান্স জানাচ্ছেন, নতুন করে দানা বেঁধেছে নতুন যুদ্ধবাদ। ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর স্টাডি অব র্যাডিকালাইজেশনের জোনাথন প্যারিস আল-কায়েদাকে নিষ্কৃতি দিয়ে জানাচ্ছেন, এটি ‘গৃহে প্রস্তুত দক্ষিণপন্থী চরমপন্থীদের কার্য।’
সাজ্জান গোয়েল ইন্টারনেটে জানাচ্ছেন, এটি জিওনিস্ট খ্রিষ্টিয়ান দ্বারা প্রভাবিত এবং অ্যান্টি-প্যালেস্টিয়ান অ্যান্টি-লিবারেল দ্বারা সংঘটিত। একজন বলছেন, ওদের শিগগির চিকিৎসার ব্যবস্থা করুন, যাতে ইউরোপের অন্যান্য শান্ত পরিবেশে অশান্তি ছড়িয়ে না পড়ে। ওরা কী চায়, তা জানতে পারি চৌদ্দ পৃষ্ঠা বক্তব্যে। চাইছে, মুছে যাক খ্রিষ্টান ছাড়া অন্য নাম, চাইছে প্যালেস্টাইনের পরাজয়, ‘নিওক্রুসেড’। আল-কায়েদা চেয়েছিল এর বিপরীত। ঈশ্বর চেয়েছেন নানা মানুষ, নানা সংস্কৃতি। ইচ্ছে করলে সব মানুষকে এক ধর্মের, গোত্রের, বর্ণের করতে পারতেন। তা ঈশ্বরের ইচ্ছা ছিল না।
নরওয়েতে প্রকৃতি ও মানুষ শান্তির বলয়ে। দানবের উৎপাত যেমন কখনো নাড়া দিয়ে যায়, তেমনি প্রস্তুত থাকতে হয় অভাবিতের। প্যালেস্টাইন ইস্যুতে জগৎকে যারা অশান্তির বলয়ে নিক্ষেপ করেছে, তাদের বিরুদ্ধে শান্তিকামীরা এগিয়ে আসুক, শান্তির সপক্ষে এটাই উদ্যোগ। নাথুরাম বিনায়ক গডেস, টিমোথি ম্যাকভে ফাঁসিতে ও ইলেকট্রিক চেয়ারে নির্বাসিত, অ্যান্ডার্স বেহরিং ব্রেভিকেরও তা-ই হবে। কত অশান্তির খবর পড়ছি দেশে-বিদেশে। প্রয়োজন এদের বিপক্ষে নরওয়েকে সমর্থন করা।
মুস্তাফা জামান আব্বাসী: সাহিত্য-সংগীতব্যক্তিত্ব।
mabbasi@dhaka.net
অধ্যাপক মুহম্মদ মনসুরউদ্দীন থাকতেন শান্তিনগরে। তাঁর পাশের বাড়িতে বাস করেন এক ভদ্রলোক, আমারই বয়সী। সকাল সাতটার দিকে শান্তিনগর মোড়ে গিয়ে খবরের কাগজ পড়ে আসা তাঁর নিত্য-অভ্যাস। প্রিয় নিশীথ সূর্যের অপরূপ কান্তি নিয়ে উদ্ভাসিত শান্তির নিবাস নরওয়েতে অশান্তির ছায়া নেমেছে। বোমার আঘাতে ৮০ জনের জীবনপ্রদীপ নির্বাপিত। বেশ কিছুদিন আগে ২২ জুলাইয়ের খবর। অসলোর কাছেই লেবার পার্টির ইয়ুথ ক্যাম্পে অ্যান্ডার্স বেহরিং ব্রেভিক নামের ৩২ বছরের এক যুবক কাণ্ডটি ঘটিয়েছেন।
নরওয়ে পৃথিবীর শান্তিপ্রিয় দেশগুলোর একটি, যার লোকসংগীত ও সাহিত্যের বিরাট ভান্ডার। লোক-ঐতিহ্যে ভরপুর নরওয়ের কথা প্রথম শুনি অধ্যাপক মনসুরউদ্দীনের কাছে। তাঁর বাড়িতে নরওয়ে থেকে আসা নামকরা ফোকলোর স্পেশালিস্টের সম্মানে দুপুরবেলার ভোজ। সস্ত্রীক আমাকে এবং আরও কয়েকজন ফোকলোরিস্টকে দাওয়াত করেছিলেন। খালি গলায় গানও শোনাতে হয়েছিল। ফোকলোরিস্টের কাছে শুনেছিলাম লোক-ঐতিহ্য ও লোকসংগীত সে দেশের সরকার নিজেরাই সংরক্ষণ করে থাকে। আধুনিক নরওয়ের সংস্কৃতি মানে উনিশ শতক থেকে প্রবাহিত জাতীয় রোমান্টিসিজম, যার ভিত্তি লোক-ঐতিহ্য। এই প্রবাহে সৃষ্ট নানা শিল্পসম্ভার ইউরোপে সমাদৃত।
পৃথিবী-বিখ্যাত কম্পোজার এডওয়ার্ড গ্রেগ ওয়ার্ল্ড কম্পোজার্স ইউনিয়নে, যার সঙ্গে ভিয়েনায় আমার দেখা। পাশেই গল্প করছিলেন বিখ্যাত রবিশংকর ও বেহালাবাদক ইয়াহুদি মেনুহিন। বিশ্ব যাঁদের চেনে তাঁরা হলেন চিত্রশিল্পী জোয়ান ক্রিস্টান ডা’ল, নাট্যকার হেনরি ইবসেন, লেখক নুট হ্যামসুন, ভাস্কর গুসতাব ভিগেল্যান্ড। ইবসেনের নাটক অভিনীত হয় বাংলাদেশের মঞ্চগুলোতে। সাহিত্যে যাঁরা নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন বার্নস্টার্ন ব্রেনসন, নুট হ্যামসন ও সিগরিট আন্ডসেট।
সমুদ্রে, ট্রেনে, মোটরে করে পর্যটকেরা আসেন নিশীথ সূর্য দেখতে, পৃথিবীর বিস্ময়। কীভাবে সূর্য জেগে থাকে চাঁদের মতো দিনের পর দিন, রাতের পর রাত। ছবি তোলেন দিনরাত, ইন্টারনেটে প্রত্যক্ষ করি, একটির চেয়ে আরেকটি সুন্দর। সে দেশের সাজানো-গোছানো শহরগুলো শব্দহীন শান্ত সুন্দর, সমুদ্রের পাশে ফিওর্ডের পাশেই ছবির মতো জেগে আছে যেন। পর্যটকদের দিবারাত্রি হাতছানি দেয়, বলে—এসো, পৃথিবীর অপরূপ দেশে যেখানে আছে নিরবচ্ছিন্ন শান্তি।
পশ্চিমে নরওয়েজিয়ান সমুদ্র, ফিওর্ডের কোল ঘেঁষে কুড়িটি শহর। অসলো সুইডেনের বর্ডার ঘেঁষে, নর্থ সি থেকে বাল্টিক সাগরের মধ্য দিয়ে জাহাজগুলো সেখানে প্রবেশ করে। নরওয়ে, সুইডেন, ফিনল্যান্ড পাশাপাশি তিনটি দেশ, একই রকম। বাল্টিক সাগরের দক্ষিণে গিয়েছিলাম এস্তোনিয়ায়, সেটিও লোকসংগীত ও লোকসংস্কৃতির দেশ। নরওয়ের জাতীয় সংগীত ভালো লেগেছিল, কারণ গানটি গাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রতি মানুষ জেগে ওঠে ভালোবাসায় আপ্লুত হয়ে। জিজ্ঞেস করায় বললেন, লোকসংগীতের আদি সুরে শান্তির প্রতি অঙ্গীকার, মানুষের প্রতি ভালোবাসা। জাতীয় সংগীত গাওয়ার সময় প্রতি রোমকূপ জেগে ওঠার কথা।
দেশের অর্ধেক মানুষ ‘স্কি হাটে’ যেতে পারে, কেবিনে ও বোটে করে জীবনকে উপভোগ করতে পারে। তারা উদ্গ্রীব, কীভাবে অন্য প্রান্তের মানুষকে কাছে টানা যায়, কীভাবে সংস্কৃতির সঙ্গে করাবে পরিচয়। এরা সুখী, সমৃদ্ধ ও উন্নত। নরওয়েজিয়ান অপেরা সরকারি আনুকূল্যে দিনের পর দিন মোহনীয়, ইউরোপের নানা রূপকথার মোহনীয় বিস্তার।
এখানে বলি আমার একটি স্বপ্নের কথা, যা বলেছি জসীমউদ্দীন, জয়নুল আবেদিন ও মনসুরউদ্দীনকে। হয়নি। তা হলেও বলি: শ্রেষ্ঠ রূপকথাগুলো নিয়ে আমাদের শিল্পীরা তৈরি করবে শ্রেষ্ঠ অপেরা, অভিনীত হবে স্বপ্নের সোনারগাঁয়ে [‘আমার কোন কূলে আজ ভিড়ল তরী, এ কোন সোনারগাঁয়’: নজরুল], যেখানে আজ লোকশিল্প জাদুঘর গড়ে উঠেছে। অপেরায় থাকবে রামায়ণ, মহাভারত, মৈমনসিংহ গীতিকা, পূর্ববঙ্গ গীতিকা, তেমনি মধ্যপ্রাচ্যের আলিফ লায়লা, সোহরাব-রুস্তম, আলীবাবা, সিন্দাবাদ থেকে শুরু করে নেটিভ আমেরিকান, লাতিন আমেরিকান, আফ্রিকান, জাপান ও চীনের রূপকথা। স্বপ্নের বিবরণ শুনে চমকে উঠেছিলেন রবিশংকর। বলেছিলেন, একমাত্র বাংলাদেশই তা পারবে, কারণ তোমরা নতুন জাতি, তোমাদের মধ্যে প্রবাহিত সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য ধারা, যা একই সঙ্গে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক। কথাটি ভুলিনি।
দুঃখভারাক্রান্ত হূদয়ে নরওয়েজিয়ান ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্সের সিনিয়র রিসার্চার জ্যাকব গদিজমিসকি বলেছেন, এই অশান্তির উৎস ইসলামি জঙ্গিবাদ উদ্ভূত নয়, এর উদ্গাতা দক্ষিণপন্থী যুদ্ধবাদীরা, তুলনীয় ওকলাহোমা সিটি বম্বিং। মার্কিন স্পেশালিস্ট উইল ম্যাকান্স জানাচ্ছেন, নতুন করে দানা বেঁধেছে নতুন যুদ্ধবাদ। ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর স্টাডি অব র্যাডিকালাইজেশনের জোনাথন প্যারিস আল-কায়েদাকে নিষ্কৃতি দিয়ে জানাচ্ছেন, এটি ‘গৃহে প্রস্তুত দক্ষিণপন্থী চরমপন্থীদের কার্য।’
সাজ্জান গোয়েল ইন্টারনেটে জানাচ্ছেন, এটি জিওনিস্ট খ্রিষ্টিয়ান দ্বারা প্রভাবিত এবং অ্যান্টি-প্যালেস্টিয়ান অ্যান্টি-লিবারেল দ্বারা সংঘটিত। একজন বলছেন, ওদের শিগগির চিকিৎসার ব্যবস্থা করুন, যাতে ইউরোপের অন্যান্য শান্ত পরিবেশে অশান্তি ছড়িয়ে না পড়ে। ওরা কী চায়, তা জানতে পারি চৌদ্দ পৃষ্ঠা বক্তব্যে। চাইছে, মুছে যাক খ্রিষ্টান ছাড়া অন্য নাম, চাইছে প্যালেস্টাইনের পরাজয়, ‘নিওক্রুসেড’। আল-কায়েদা চেয়েছিল এর বিপরীত। ঈশ্বর চেয়েছেন নানা মানুষ, নানা সংস্কৃতি। ইচ্ছে করলে সব মানুষকে এক ধর্মের, গোত্রের, বর্ণের করতে পারতেন। তা ঈশ্বরের ইচ্ছা ছিল না।
নরওয়েতে প্রকৃতি ও মানুষ শান্তির বলয়ে। দানবের উৎপাত যেমন কখনো নাড়া দিয়ে যায়, তেমনি প্রস্তুত থাকতে হয় অভাবিতের। প্যালেস্টাইন ইস্যুতে জগৎকে যারা অশান্তির বলয়ে নিক্ষেপ করেছে, তাদের বিরুদ্ধে শান্তিকামীরা এগিয়ে আসুক, শান্তির সপক্ষে এটাই উদ্যোগ। নাথুরাম বিনায়ক গডেস, টিমোথি ম্যাকভে ফাঁসিতে ও ইলেকট্রিক চেয়ারে নির্বাসিত, অ্যান্ডার্স বেহরিং ব্রেভিকেরও তা-ই হবে। কত অশান্তির খবর পড়ছি দেশে-বিদেশে। প্রয়োজন এদের বিপক্ষে নরওয়েকে সমর্থন করা।
মুস্তাফা জামান আব্বাসী: সাহিত্য-সংগীতব্যক্তিত্ব।
mabbasi@dhaka.net
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন