মুস্তাফা জামান আব্বাসী | তারিখ: ১৮-০৫-২০১০
পশুপতি খান সৈয়দ মুজতবা আলীর ঘনিষ্ঠ সহচর, বন্ধু, যাকে বলে পারসোনাল অ্যাসিস্ট্যান্ট। তাঁর কেনাকাটা ও যাবতীয় কাজ সমাধা করতেন। সকাল ১০টার দিকে ধরিয়ে দিতেন কী কী কিনে এনেছেন আগের দিনের ফর্দ অনুযায়ী। প্রথমেই জিজ্ঞেস করলেন, কলম এনেছ? পশুপতি জিজ্ঞাসুনেত্রে বললেন, কলমের কথা তো লেখা হয়নি।
আলী বললেন, বাবা পশুপতি, কলম তো রোজ হারায়, রোজ আনতে হয় এটুকু বোঝোনি এত দিনে? এখন কী দিয়ে লিখি?
সামনেই দাঁড়িয়ে আমি। জামাই যে তাঁর দামি জর্মন কলমটি গতরাতে পকেটস্থ করেছে তা তাঁর স্বপ্নেরও অগোচর। এই কলমটা দিয়ে লিখলে হয়তো মুজতবা আলীর কিছু পাব, সে গুড়ে বালি। এক্ষণে কলমটি ফেরত দিতে পারলেই বর্তে যাই। বললাম, মামা, কলমটি ভুলে গতকাল আমার পকেটে আশ্রয় নিয়েছিল। এখন মালিকের কাছে প্রত্যর্পণ করলাম। মামাশ্বশুর বিন্দুমাত্র আশ্চর্য না হয়ে বললেন, তুমি ছাড়া আর কেউ এই কর্মটি করবে না, এ আমি জানতাম। বললাম, কীভাবে জানলেন? উত্তর দিলেন, যে জানে সে জানে।
কলম দিয়ে লিখলেই যে কলামিস্ট হওয়া যাবে তা নয়। কলামিস্টের লেখা হতে হবে কুরকুরে। কুড়মুড়ে মুড়ির মতো। যে মুড়ি ভালোবাসে, পৃথিবী জয় করতে পারে সে, কথাটা বলেছিলেন পল্লীকবি জসীমউদ্দীন। বলেছিলেন, ‘আমার হাতের লেখা খারাপ হতেই পারে। ডাক্তারদের লেখাও তো কেউ পড়তে পারে না। আমি কলম দিয়ে লিখি না, লিখি মন দিয়ে। আমার বাড়ির মুড়ি যেমন খাঁটি সরিষার তেল, কাঁচা লংকা ও পেঁয়াজ দিয়ে প্রস্তুত, তেমনি লেখাটিও মুড়ির মতোই টাটকা ও কুরকুরে। যে জানে সে জানে।’
অন্যের বদনাম দিয়ে প্রস্তুত না হলে সে লেখা দিয়ে পাঠকদের হাত করা যায় না। পরচর্চাই কলামিস্টের প্রধান হাতিয়ার। পরচর্চা করব নিঃসন্দেহে কারও গায়ে যেন আঁচড়টি না লাগে। হাতে কলম গুঁজে দিয়েছেন, লিখব মন দিয়ে, মনে যা খেলা করে। মনের কথা পৌঁছে যাবে লাখো মানুষের সকালবেলার চায়ের টেবিলে, যেমনটি গান গেয়ে এসেছি রেডিওতে-টেলিভিশনে ৫০ বছর।
‘আপনার আজকের রেডিওর গানটি শুনতে গিয়ে কত কথা যে মনে পড়ল, এ গান শুনেছি ছোটবেলায় এক বৃদ্ধার কণ্ঠে। আপনি কেমন করে সংগ্রহ করে আনলেন আজ সকালের গানটি, “আমি মরিব রে দরিয়ায় ঝম্প ওরে দিয়া”।’ অথবা টেলিভিশন প্রোগ্রাম দেখে একজন বললেন, আমি উপস্থাপনা শুনি, গান নয়। ভাবলাম, কী এমন বলেছিলাম, যা তাঁর মনে রয়ে গেল।
ট্রেনে চাপলেই উৎসুক শ্রোতা ঘিরে থাকত আমাকে। গপ্পু, গল্প জানি, বানাতেও ওস্তাদ। এখন আর গল্প শোনাই না, নিজেই শুনি। একজন গ্রাম্য হালুয়া ধরে বসল ডোমারের বাজারে। ‘সগাঁয় কছে, দুই হাজার একুশ সনে বলে কি হইবে? দ্যাশ বলে ভাসি যাইবে, চাউল, ডাইল আর তরিতরকারি দিয়া’?
উত্তর একটা দিতেই হয়। বললাম, ‘ওই সালে হালুয়া ক্ষ্যাতোৎ আসি দেইখবে ফসল ফলি আছে, এমন বীজ বাইর হইবে কম্পুটারের মাথা থাকি, এক মণ ফসল হইবে এক শ মণ।’
আর বলিনি। স্বপ্নে পোলাও খেলে আপত্তি কী? স্বপ্ন ফলাতে হয় বিশ্বাস দিয়ে। বিশ্বাসের মূলোৎপাটন হলে স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যায়। আসল কথা হলো, বিশ্বাস আছে কি? এত যে কথার বান চারিদিকে, বাচনিকের বিশ্বাস কতটুকু? বিশ্বাস অর্জন করতে পারলে স্বপ্নের বাস্তবায়ন অসম্ভব নয়। যে জানে সে জানে।
সংবাদপত্রজুড়ে মৃত্যু। ফাঁদ চারিদিকে, যেন মৃত্যু ওত পেতে আছে।
অপ্রত্যাশিত, অভাবিত, অবশ্যম্ভাবী শুধু মৃত্যুর খবর। কলমের ডগায় আমার স্বপ্নের বিস্তার। মৃত্যু নয়, বেঁচে থাকাই সবচেয়ে আশ্চর্যের, সবচেয়ে মূল্যবান। হাটে-বন্দরে ঘুরে বেড়াই। কত কথা শুনি। ওদের কথা কাগজে আসে না। ওদের থেকে আমরা যে আলাদা। আমরা আছি মহাসুখে, ওদের কথা ভাবি না, বলি না। কখনো বলি গানের সুরে, কবিতায়, কখনো নাটকের সংলাপে। ব্যস। পয়লা বৈশাখে অনেক ঢুলি ঢাকায় এসেছিলেন। ভাবলাম, ভালোই হলো, তাঁদের ঝুলিতে এবার কিছু সঞ্চয় হবে। একজনকে কাছে পেয়ে জিজ্ঞেস করলাম, পকেটে গিয়াস উদ্দিন কিছু এসেছে? [গিয়াস উদ্দিন মানে অর্থ সমাগম, এটা একটি কোড]। শুকনো মুখে বললেন তপন পাণ্ডে, স্যার, সারা দিন ঢোল বাজিয়ে যা পেলাম, স্ত্রীকে তার কথা বলতে পারব না। খোরাকি ও যাতায়াতেই শেষ। হায় রে পয়লা বৈশাখ! হায় রে ঢুলি! হায় রে একতারাবাদক! হায় রে বাউল। মধ্যবিত্তদের শখের আসরে পয়লা বৈশাখ যাও বা এসেছিল, তাতে লোকসংস্কৃতির ভান্ডারে এসেছিল সামান্যই। বিগ বাজেটের মহাসমারোহে অপাঙেক্তয়রা বাইরেই রয়ে গেলেন।
হাটের হাটুরে, মাঠের গিদাল, ইশকুলের পাঠুরে, ভাটির নাইয়া, তাঁতের জোলা, শুকনার হালুয়া, নদীর জাউলা, এদের কথা গানেই, কলামে নেই। উঠতি মধ্যবিত্ত ও বড়লোকদের চিন্তাভাবনায়, পরিকল্পনায় এদের স্থান কতটুকু ভেবে অবাক হই। অথচ ওদের নিয়েই তো স্বপ্নের মহাফানুসের ঘর বানিয়েছি। আদতে আমরা যে তিমিরে, সেই তিমিরেই। যত দিন না চিন্তায় উঠে আসবে সাধারণ মানুষের কথা, তাদের দুঃখ-দুর্দশা অবসানের চালচিত্র, তত দিন এটি কলমবিলাস, নস্ফিল চর্চা। নানা ছলে তাদেরই কথা বলব। তাদেরই ভাবনা তুলে ধরব, তাহলেই খানিকটা সান্ত্বনা।
বইমেলায় গিয়েছি। স্টল, বই, হাজার হাজার দর্শক। উন্মাদনাটি উপভোগ করার মতো। অধিকাংশই চিনাবাদাম ও ফুচকার ক্রেতা, গান শুনতে আসা, ভালো সময় কাটানোর দর্শকদের জনারণ্য। বই? লেখক হিসেবে আরেকজনকে জিজ্ঞেস করলাম, ভাই, কিছু বেচাবিক্রি হলো? উত্তর: লেখক তো মোটে কয়েকজন, তাঁদের বই বিক্রি হয়েছে, বাকির বিক্রি সামান্যই। যে দিন বাংলাদেশে হাজার লেখকের বই বিক্রি হবে হাজার হাজার, সে দিনের স্বপ্ন দেখছি।
গাড়িতে কোথাও যেতে হলে অনেক সময় হাতে নিতে হয়। কোথাও যাওয়ার উৎসাহ হারিয়ে ফেলি। বাড়িতে বসে থাকি। এমন যদি হতো, ঢাকায় একটিও মোটরগাড়ি নেই, কেমন হতো? সারা দিন হাঁটতাম, শরীর ভালো থাকত। মাঝেমধ্যে লম্বা সফরের জন্য, বাস। আমার সবচেয়ে ভালো লাগে হাঁটতে। মসজিদে, অফিসে, বিপণিবিতানে, যাঁরা দামি গাড়িতে চড়ে আসেন, একদম দোরগোড়ায় নামাতে হবে, ওঠাতেও হবে। কারণ, ওনারা দামি লোক। তাঁদের আচরণ অবাক হয়ে প্রত্যক্ষ করি। কীভাবে বড়লোক হলো এরা? এরা কি দেশের কথা ভাবে না? হাঁটার কথা বললেই বেজার। আমেরিকায় গিয়ে এরাই তো অনায়াসে দু-তিন মাইল হেঁটে বাজার করে, টিউব স্টেশনে যায়। বাঁচব সবাইকে নিয়ে, একা নয়। চলব সবাইকে নিয়ে, একা নয়। যে জানে সে জানে।
২৬ এপ্রিল, ২০১০
মুস্তাফা জামান আব্বাসী: লেখক ও সংগীত ব্যক্তিত্ব।
mabbasi@dhaka.net
আলী বললেন, বাবা পশুপতি, কলম তো রোজ হারায়, রোজ আনতে হয় এটুকু বোঝোনি এত দিনে? এখন কী দিয়ে লিখি?
সামনেই দাঁড়িয়ে আমি। জামাই যে তাঁর দামি জর্মন কলমটি গতরাতে পকেটস্থ করেছে তা তাঁর স্বপ্নেরও অগোচর। এই কলমটা দিয়ে লিখলে হয়তো মুজতবা আলীর কিছু পাব, সে গুড়ে বালি। এক্ষণে কলমটি ফেরত দিতে পারলেই বর্তে যাই। বললাম, মামা, কলমটি ভুলে গতকাল আমার পকেটে আশ্রয় নিয়েছিল। এখন মালিকের কাছে প্রত্যর্পণ করলাম। মামাশ্বশুর বিন্দুমাত্র আশ্চর্য না হয়ে বললেন, তুমি ছাড়া আর কেউ এই কর্মটি করবে না, এ আমি জানতাম। বললাম, কীভাবে জানলেন? উত্তর দিলেন, যে জানে সে জানে।
কলম দিয়ে লিখলেই যে কলামিস্ট হওয়া যাবে তা নয়। কলামিস্টের লেখা হতে হবে কুরকুরে। কুড়মুড়ে মুড়ির মতো। যে মুড়ি ভালোবাসে, পৃথিবী জয় করতে পারে সে, কথাটা বলেছিলেন পল্লীকবি জসীমউদ্দীন। বলেছিলেন, ‘আমার হাতের লেখা খারাপ হতেই পারে। ডাক্তারদের লেখাও তো কেউ পড়তে পারে না। আমি কলম দিয়ে লিখি না, লিখি মন দিয়ে। আমার বাড়ির মুড়ি যেমন খাঁটি সরিষার তেল, কাঁচা লংকা ও পেঁয়াজ দিয়ে প্রস্তুত, তেমনি লেখাটিও মুড়ির মতোই টাটকা ও কুরকুরে। যে জানে সে জানে।’
অন্যের বদনাম দিয়ে প্রস্তুত না হলে সে লেখা দিয়ে পাঠকদের হাত করা যায় না। পরচর্চাই কলামিস্টের প্রধান হাতিয়ার। পরচর্চা করব নিঃসন্দেহে কারও গায়ে যেন আঁচড়টি না লাগে। হাতে কলম গুঁজে দিয়েছেন, লিখব মন দিয়ে, মনে যা খেলা করে। মনের কথা পৌঁছে যাবে লাখো মানুষের সকালবেলার চায়ের টেবিলে, যেমনটি গান গেয়ে এসেছি রেডিওতে-টেলিভিশনে ৫০ বছর।
‘আপনার আজকের রেডিওর গানটি শুনতে গিয়ে কত কথা যে মনে পড়ল, এ গান শুনেছি ছোটবেলায় এক বৃদ্ধার কণ্ঠে। আপনি কেমন করে সংগ্রহ করে আনলেন আজ সকালের গানটি, “আমি মরিব রে দরিয়ায় ঝম্প ওরে দিয়া”।’ অথবা টেলিভিশন প্রোগ্রাম দেখে একজন বললেন, আমি উপস্থাপনা শুনি, গান নয়। ভাবলাম, কী এমন বলেছিলাম, যা তাঁর মনে রয়ে গেল।
ট্রেনে চাপলেই উৎসুক শ্রোতা ঘিরে থাকত আমাকে। গপ্পু, গল্প জানি, বানাতেও ওস্তাদ। এখন আর গল্প শোনাই না, নিজেই শুনি। একজন গ্রাম্য হালুয়া ধরে বসল ডোমারের বাজারে। ‘সগাঁয় কছে, দুই হাজার একুশ সনে বলে কি হইবে? দ্যাশ বলে ভাসি যাইবে, চাউল, ডাইল আর তরিতরকারি দিয়া’?
উত্তর একটা দিতেই হয়। বললাম, ‘ওই সালে হালুয়া ক্ষ্যাতোৎ আসি দেইখবে ফসল ফলি আছে, এমন বীজ বাইর হইবে কম্পুটারের মাথা থাকি, এক মণ ফসল হইবে এক শ মণ।’
আর বলিনি। স্বপ্নে পোলাও খেলে আপত্তি কী? স্বপ্ন ফলাতে হয় বিশ্বাস দিয়ে। বিশ্বাসের মূলোৎপাটন হলে স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যায়। আসল কথা হলো, বিশ্বাস আছে কি? এত যে কথার বান চারিদিকে, বাচনিকের বিশ্বাস কতটুকু? বিশ্বাস অর্জন করতে পারলে স্বপ্নের বাস্তবায়ন অসম্ভব নয়। যে জানে সে জানে।
সংবাদপত্রজুড়ে মৃত্যু। ফাঁদ চারিদিকে, যেন মৃত্যু ওত পেতে আছে।
অপ্রত্যাশিত, অভাবিত, অবশ্যম্ভাবী শুধু মৃত্যুর খবর। কলমের ডগায় আমার স্বপ্নের বিস্তার। মৃত্যু নয়, বেঁচে থাকাই সবচেয়ে আশ্চর্যের, সবচেয়ে মূল্যবান। হাটে-বন্দরে ঘুরে বেড়াই। কত কথা শুনি। ওদের কথা কাগজে আসে না। ওদের থেকে আমরা যে আলাদা। আমরা আছি মহাসুখে, ওদের কথা ভাবি না, বলি না। কখনো বলি গানের সুরে, কবিতায়, কখনো নাটকের সংলাপে। ব্যস। পয়লা বৈশাখে অনেক ঢুলি ঢাকায় এসেছিলেন। ভাবলাম, ভালোই হলো, তাঁদের ঝুলিতে এবার কিছু সঞ্চয় হবে। একজনকে কাছে পেয়ে জিজ্ঞেস করলাম, পকেটে গিয়াস উদ্দিন কিছু এসেছে? [গিয়াস উদ্দিন মানে অর্থ সমাগম, এটা একটি কোড]। শুকনো মুখে বললেন তপন পাণ্ডে, স্যার, সারা দিন ঢোল বাজিয়ে যা পেলাম, স্ত্রীকে তার কথা বলতে পারব না। খোরাকি ও যাতায়াতেই শেষ। হায় রে পয়লা বৈশাখ! হায় রে ঢুলি! হায় রে একতারাবাদক! হায় রে বাউল। মধ্যবিত্তদের শখের আসরে পয়লা বৈশাখ যাও বা এসেছিল, তাতে লোকসংস্কৃতির ভান্ডারে এসেছিল সামান্যই। বিগ বাজেটের মহাসমারোহে অপাঙেক্তয়রা বাইরেই রয়ে গেলেন।
হাটের হাটুরে, মাঠের গিদাল, ইশকুলের পাঠুরে, ভাটির নাইয়া, তাঁতের জোলা, শুকনার হালুয়া, নদীর জাউলা, এদের কথা গানেই, কলামে নেই। উঠতি মধ্যবিত্ত ও বড়লোকদের চিন্তাভাবনায়, পরিকল্পনায় এদের স্থান কতটুকু ভেবে অবাক হই। অথচ ওদের নিয়েই তো স্বপ্নের মহাফানুসের ঘর বানিয়েছি। আদতে আমরা যে তিমিরে, সেই তিমিরেই। যত দিন না চিন্তায় উঠে আসবে সাধারণ মানুষের কথা, তাদের দুঃখ-দুর্দশা অবসানের চালচিত্র, তত দিন এটি কলমবিলাস, নস্ফিল চর্চা। নানা ছলে তাদেরই কথা বলব। তাদেরই ভাবনা তুলে ধরব, তাহলেই খানিকটা সান্ত্বনা।
বইমেলায় গিয়েছি। স্টল, বই, হাজার হাজার দর্শক। উন্মাদনাটি উপভোগ করার মতো। অধিকাংশই চিনাবাদাম ও ফুচকার ক্রেতা, গান শুনতে আসা, ভালো সময় কাটানোর দর্শকদের জনারণ্য। বই? লেখক হিসেবে আরেকজনকে জিজ্ঞেস করলাম, ভাই, কিছু বেচাবিক্রি হলো? উত্তর: লেখক তো মোটে কয়েকজন, তাঁদের বই বিক্রি হয়েছে, বাকির বিক্রি সামান্যই। যে দিন বাংলাদেশে হাজার লেখকের বই বিক্রি হবে হাজার হাজার, সে দিনের স্বপ্ন দেখছি।
গাড়িতে কোথাও যেতে হলে অনেক সময় হাতে নিতে হয়। কোথাও যাওয়ার উৎসাহ হারিয়ে ফেলি। বাড়িতে বসে থাকি। এমন যদি হতো, ঢাকায় একটিও মোটরগাড়ি নেই, কেমন হতো? সারা দিন হাঁটতাম, শরীর ভালো থাকত। মাঝেমধ্যে লম্বা সফরের জন্য, বাস। আমার সবচেয়ে ভালো লাগে হাঁটতে। মসজিদে, অফিসে, বিপণিবিতানে, যাঁরা দামি গাড়িতে চড়ে আসেন, একদম দোরগোড়ায় নামাতে হবে, ওঠাতেও হবে। কারণ, ওনারা দামি লোক। তাঁদের আচরণ অবাক হয়ে প্রত্যক্ষ করি। কীভাবে বড়লোক হলো এরা? এরা কি দেশের কথা ভাবে না? হাঁটার কথা বললেই বেজার। আমেরিকায় গিয়ে এরাই তো অনায়াসে দু-তিন মাইল হেঁটে বাজার করে, টিউব স্টেশনে যায়। বাঁচব সবাইকে নিয়ে, একা নয়। চলব সবাইকে নিয়ে, একা নয়। যে জানে সে জানে।
২৬ এপ্রিল, ২০১০
মুস্তাফা জামান আব্বাসী: লেখক ও সংগীত ব্যক্তিত্ব।
mabbasi@dhaka.net
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন