ইফতার
আশীষ-উর-রহমান

কখনো রোদ, কখনো বৃষ্টি-এই ছিল গতকাল সারা বেলা। পথ কাদাপানিতে একাকার। তবে মেঘমেদুর আবহাওয়া সহায়ক হয়েছিল সিয়াম সাধনার জন্য। বিকেলের দিকে অবশ্য আকাশ বেশ পরিষ্কার হয়ে এসেছিল। সেই সুযোগে বসে গিয়েছিল ঐতিহ্যবাহী ইফতারির পসরা। হোটেলের সামনে, পাড়ার মোড়ে, বাজারগুলোর পথের ধারে, নামজাদা বিপণিবিতানগুলোর সামনে, বাণিজ্যিক এলাকার ফুটপাতে—একরকম সারা শহরই যেন হয়ে উঠেছিল ইফতারির বাজার। টেবিল পেতে তার ওপর লালসালু দিয়ে ঢাকা ঝুরিভরা পেঁয়াজু, বেগুনি, ছোলা, ঘুগনি, জিলাপিসহ হরেক রকমের উপকরণ সাজিয়ে শুরু হয়ে যায় বেচাকেনার পালা। মাগরিবের আজানের আগেই পসরা শূন্য।
বিক্রেতারা জানালেন, ইফতারির পদগুলোর দাম না বাড়ানোরই চেষ্টা করেছেন তাঁরা। বেইলি রোডে ফখরুদ্দিন ফুডস প্রায় অর্ধশত পদ নিয়ে বসেছে ইফতারি বাজার। প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান হাজি মোহাম্মদ রফিক জানালেন, ইফতারির পদগুলোর দাম গত বছরের মতোই আছে। তাঁদের ইফতারের খাবারে লাভের বিষয়টি প্রাধান্য পায় না। বরং সারা দিন রোজা রেখে মুসল্লিরা যেন তৃপ্তির সঙ্গে প্রিয় পদগুলো দিয়ে ইফতার করতে পারেন, সে ব্যাপারেই তাঁরা সচেষ্ট থাকেন।
এখানে খাসির হালিম বড় বাটি বিক্রি হয়েছে ৩৫০ টাকা, ছোট ১০০ টাকা এবং মুরগির হালিম বড় বাটি ৫০০ টাকায়। জিলাপি বড় ১৫০ টাকা কেজি, গরুর চাপ ৪০০ টাকা কেজি, খাসির চাপ ৫০০ টাকা কেজি। খাসির কাচ্চি বড় বাক্স ২০০ টাকা, তেহারি বড় বাক্স ১৪০ টাকা। আস্ত মুরগির রোস্ট ৩০০ টাকা ও খাসির আস্ত পায়ের রোস্ট ৫০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
ইফতারি কিনতে আসা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের চাকুরে সফিউদ্দিন আহমেদ বললেন, ‘এদের হালিম অনেক দিন থেকেই কিনি। প্রথম রোজায় মূলত হালিম কিনতেই এসেছি। দাম গতবারের মতোই আছে। মাংসের কিছু কিছু জিনিসের দাম মনে হচ্ছে একটু যেন বেড়েছে।’ তাঁর মতো অনেকেই প্রথম রোজার ইফতারির জন্য প্রিয় পদগুলো সংগ্রহ করতে পছন্দের ইফতারির দোকানে এসেছিলেন।
পুরান ঢাকার চকবাজারেও বরাবরের মতো দুপুর থেকে চকশাহী মসজিদের সামনের রাস্তাজুড়ে বসেছিল ঐতিহ্যবাহী ইফতারির বাজার। এখানে আস্ত খাসির রোস্টসহ সুতি, মুঠিয়া, জালি, শিক, বঁটি, রেশমি কাবাব, সমুচা, চপ, শিঙাড়া আর ঘুগনি, ছোলা-পেঁয়াজু-জিলাপির মতো হরেক রকমের ইফতারির পদের বৈচিত্র্যময় সমারোহে জমজমাট হয়ে উঠেছিল বাজার। তবে কাবাব, রোস্ট কেনার সামর্থ্য সবার নেই। তাই বেশির ভাগ স্বল্প আয়ের মানুষেরই ভরসা মুড়ি-ছোলা-পেঁয়াজু। তাই দিয়েই সেরে নিয়েছেন তাঁরা প্রথম রোজার ইফতার।
যানজট ঢাকা শহরে নতুন কিছু নয়। তবে গতকাল এতেও পরিবর্তন লক্ষণীয় ছিল। দুপুরের পর থেকেই বেড়ে উঠেছিল যানজট, সন্ধ্যার আগে তো প্রচণ্ড। প্রথম রোজার দিনে অধিকাংশ রোজাদারই চেষ্টা করেছেন বাড়ি ফিরে পরিবার-পরিজনের সঙ্গে একত্রে ইফতার করতে। সে কারণে ভিড়ভাট্টাও বেড়েছিল যানবাহনে। তবে ইফতারের আগের মুহূর্তে বেশ ফাঁকা হয়ে আসে পথের জটলা।
রোজার মাসে বদলেছে ঘর-গেরস্তালির কাজকর্মের চিরাচরিত ধারাও। রান্নাঘরে গৃহিণীদের কর্মব্যস্ততা শুরু হয়েছে দুুপুরের পর থেকেই। সাধ্যমতো ভালো খাবারের আয়োজন করতে চেষ্টা করেছেন সবাই। ইফতারির নানা পদ, রাতের খাবার, সেহিরর আয়োজন—এসব সম্পন্ন করতেই ঘনিয়ে এসেছে সন্ধ্যা। তারপর পরিবারের সবাই মিলে একত্রে খাদ্যপানীয় নিয়ে টেবিলে বসা।
সংযমের মধ্য দিয়ে আত্মশুদ্ধির আহ্বান নিয়ে এসেছে পবিত্র মাহে রমজান। সেই সাধনা জীবনের সর্বক্ষেত্রে সর্বাঙ্গীণ কল্যাণ বয়ে আনুক—এই প্রার্থনাও ছিল রমজানের প্রথম দিনটিতে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন