আজ পঁচিশে বৈশাখ। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৫১তম জন্মবার্ষিকী। এই দিনে সারা দেশেই হবে রবীন্দ্র-উৎসব। আমরা কথা বলার জন্য বেছে নিয়েছি ভারতের দক্ষিণী রাজ্য কর্ণাটককে। কেন, সেটা পরে বলছি।
কর্ণাটকের রাজধানী বেঙ্গালুরু। অধিকাংশ কন্নড় ভাষাভাষীদের বাস এখানেই। ভারতের গার্ডেন সিটি হিসেবেও পরিচিত বেঙ্গালুরু। নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়া। শীতের আধিক্য নেই। গরমের প্রকোপ কম। এখনো এখানে মানুষ আসে আবহাওয়া পরিবর্তনের জন্য। আগে অবশ্য কর্ণাটক মহীশূর রাজ্য হিসেবে পরিচিত ছিল। ১৯৫৫ সালে মহীশূর থেকে হয় কর্ণাটক রাজ্য।
এই রাজ্যের রাজধানীতে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ বেশ কয়েকবার এসেছেন। থেকেছেন। লিখেছেন। সবচেয়ে গর্বের কথা, এই বেঙ্গালুরু শহরেই কবিগুরু লিখেছিলেন তাঁর কালজয়ী উপন্যাস শেষের কবিতা। ১৯২৮ সালে। আজ কবিগুরু নেই, কিন্তু বেঙ্গালুরু শহরে এখনো ইতিহাসের সাক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে কবিগুরুর স্মৃতিবাহী সেই শেষের কবিতার আঁতুড়ঘর। তবে নেই আঁতুড়ঘরের যে বাগানে বসে কবিগুরু শেষের কবিতার পাণ্ডুলিপি রচনা করেছিলেন, সেই বাগানে কবিগুরুর নামে থাকা ঐতিহাসিক প্রস্তর স্মারকটি। বেঙ্গালুরু শহরের প্যালেস রোডে ছিল সেই ঐতিহাসিক বেলাব্রুয়ি ভবন। এখানেই এসেছিলেন কবিগুরু। রচনা করেছিলেন শেষের কবিতা। আজও সেই ভবনটি আছে। আছে কবিগুরু যে ঘরটিতে থেকেছেন সেই ঘরটিও। কিন্তু নেই কবিগুরুর স্মৃতিচিহ্ন। এখন সেই ভবনটি হয়ে গেছে সরকারি অতিথিশালা। কবিগুরুর সেই ঐতিহাসিক শয়নকক্ষটি হয়ে গেছে অতিথিদের শয়নকক্ষ। আর বেলাব্রুয়ির ভবনটি হয়ে গেছে বেলাব্রুয়ি স্টেট হসপিটালিটি অরগানাইজেশন। সরকারি উদ্যোগে হয়েছে এই ভবনের আধুনিকীকরণ। এখন এটি বিধায়ক আর মন্ত্রীদের ক্লাব।
ইতিহাসের পাতা থেকে জানা যায়, ১৯১৯ সালে কবিগুরু মহীশূর নাট্য সংস্থার আমন্ত্রণে এসেছিলেন এই বেঙ্গালুরুতে। উঠেওছিলেন এখানে। সেই উৎসবে কবিগুরু পাঠ করেছিলেন ‘দ্য ম্যাসেজ অব দ্য ফরেস্ট’ প্রবন্ধটি। আজও অবশ্য বেলাব্রুয়ির সেই অতিথি ভবনে কবিগুরুর প্রথম পদার্পণের কথাটি দেয়ালের এক ফলকে লেখা রয়েছে। তবে কবি এই অতিথি ভবনের যে বাগানে বসে শেষের কবিতার পাণ্ডুলিপি রচনা করেছিলেন, সেই স্মৃতি রক্ষার্থে বাগানে রাখা প্রস্তর ফলকটি আর আজ নেই। ওই ফলকে লেখা ছিল ‘এই জায়গায় বসে কবিগুরু শেষের কবিতা রচনা করেছিলেন।’
১৯২৮ সালের জুন মাস নাগাদ কবিগুরু ফের বেঙ্গালুরুতে আসেন। ওঠেন এই অতিথি ভবনেই। সেবার তিনি এসেছিলেন সুপণ্ডিত বন্ধুবর মহীশূর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। ব্রজেন্দ্রনাথ শীলের আমন্ত্রণে। কবিগুরু সেবার ছিলেন সপ্তাহ তিনেক। ওই সময়ই রচনা করেন শেষের কবিতা। আর সেই পাণ্ডুলিপি পড়েও শোনান ব্রজেন্দ্রনাথ শীলসহ অন্যদের। রবীন্দ্র রচনাবলির শেষের কবিতার শেষে রচনা কালের সময়সূচিতে লেখা আছে ব্যালাব্রুয়ি বাঙ্গালোর/২৫ জুলাই, ১৯২৮। সত্যিকথা কি বেঙ্গালুরুর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং মেঘালয়ের রাজধানী শিলংয়ের প্রাকৃতিক শোভাই কবিগুরুকে অনুপ্রাণিত করেছিল শেষের কবিতা লিখতে। যদিও শেষের কবিতায় ঠাঁই পেয়েছে শিলংই।
সত্তরের দশকে কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন দেবরাজ আর্শ। তাঁর আমলে বেলাব্রুয়ির বাগানবাড়ি নতুনরূপে সাজানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়। আর তখনই বাগানে থাকা শেষের কবিতা লেখার স্মৃতিবাহী স্মারকটি তুলে নেওয়া হয়। তখন অবশ্য কবিগুরু যে কক্ষে ছিলেন সেই কক্ষটিকে নতুন রূপে সাজানো হয়। কবির শয়নকক্ষটি হয়ে যায় অতিথিদের বিশ্রামঘর।
১৯৮২ সাল নাগাদ কর্ণাটকের রাজ্যপাল ছিলেন অশোকনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়। ওই সময় অশোক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সহধর্মিণী সুব্রতা বন্দ্যোপাধ্যায় খোঁজ পান কবিগুরুর শেষের কবিতা লেখার সেই ঐতিহাসিক স্মৃতিফলকের। তিনি উদ্যোগ নেন এটি বেলাব্রুয়ির সেই বাগানে স্থাপনের। কিন্তু সুব্রতা মুখোপাধ্যায়ের আকস্মিক প্রয়াণ এবং অশোক বন্দ্যোপাধ্যায়ের অবসর গ্রহণে থেমে যায় সেই প্রস্তর ফলক স্থাপনের প্রক্রিয়া। কালক্রমে সেই ফলকটিও উধাও হয়ে যায়।
ইতিমধ্যে বেঙ্গালুরু ও কলকাতার রবীন্দ্রভক্তরা কর্ণাটক সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছেন, কবিগুরুর শেষের কবিতার আঁতুড়ঘরকে রক্ষা করার। আবেদনে বলা হয়েছে, কবিগুরুর স্মৃতিবাহী ঐতিহাসিক কক্ষটিকে সংরক্ষিত করা হোক। আর বাগানের যেখানে বসে কবিগুরু শেষের কবিতার পাণ্ডুলিপি রচনা করেছিলেন সেই স্থানে বসানো হোক একটি স্মৃতিফলক। কবিগুরুর সার্ধশত জন্মবর্ষে এই দাবি ওঠে কলকাতার রবীন্দ্রভক্তদের। কর্ণাটক সরকার বিশ্ববরেণ্য কবির স্মৃতিরক্ষার্থে এই দাবি না মানলে হয়তো ইতিহাসের পাতা থেকে উঠে যাবে কবিগুরুর শেষের কবিতা লেখার আঁতুড়ঘরের ইতিহাস।
অমর সাহা
কলকাতা
কর্ণাটকের রাজধানী বেঙ্গালুরু। অধিকাংশ কন্নড় ভাষাভাষীদের বাস এখানেই। ভারতের গার্ডেন সিটি হিসেবেও পরিচিত বেঙ্গালুরু। নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়া। শীতের আধিক্য নেই। গরমের প্রকোপ কম। এখনো এখানে মানুষ আসে আবহাওয়া পরিবর্তনের জন্য। আগে অবশ্য কর্ণাটক মহীশূর রাজ্য হিসেবে পরিচিত ছিল। ১৯৫৫ সালে মহীশূর থেকে হয় কর্ণাটক রাজ্য।
এই রাজ্যের রাজধানীতে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ বেশ কয়েকবার এসেছেন। থেকেছেন। লিখেছেন। সবচেয়ে গর্বের কথা, এই বেঙ্গালুরু শহরেই কবিগুরু লিখেছিলেন তাঁর কালজয়ী উপন্যাস শেষের কবিতা। ১৯২৮ সালে। আজ কবিগুরু নেই, কিন্তু বেঙ্গালুরু শহরে এখনো ইতিহাসের সাক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে কবিগুরুর স্মৃতিবাহী সেই শেষের কবিতার আঁতুড়ঘর। তবে নেই আঁতুড়ঘরের যে বাগানে বসে কবিগুরু শেষের কবিতার পাণ্ডুলিপি রচনা করেছিলেন, সেই বাগানে কবিগুরুর নামে থাকা ঐতিহাসিক প্রস্তর স্মারকটি। বেঙ্গালুরু শহরের প্যালেস রোডে ছিল সেই ঐতিহাসিক বেলাব্রুয়ি ভবন। এখানেই এসেছিলেন কবিগুরু। রচনা করেছিলেন শেষের কবিতা। আজও সেই ভবনটি আছে। আছে কবিগুরু যে ঘরটিতে থেকেছেন সেই ঘরটিও। কিন্তু নেই কবিগুরুর স্মৃতিচিহ্ন। এখন সেই ভবনটি হয়ে গেছে সরকারি অতিথিশালা। কবিগুরুর সেই ঐতিহাসিক শয়নকক্ষটি হয়ে গেছে অতিথিদের শয়নকক্ষ। আর বেলাব্রুয়ির ভবনটি হয়ে গেছে বেলাব্রুয়ি স্টেট হসপিটালিটি অরগানাইজেশন। সরকারি উদ্যোগে হয়েছে এই ভবনের আধুনিকীকরণ। এখন এটি বিধায়ক আর মন্ত্রীদের ক্লাব।
ইতিহাসের পাতা থেকে জানা যায়, ১৯১৯ সালে কবিগুরু মহীশূর নাট্য সংস্থার আমন্ত্রণে এসেছিলেন এই বেঙ্গালুরুতে। উঠেওছিলেন এখানে। সেই উৎসবে কবিগুরু পাঠ করেছিলেন ‘দ্য ম্যাসেজ অব দ্য ফরেস্ট’ প্রবন্ধটি। আজও অবশ্য বেলাব্রুয়ির সেই অতিথি ভবনে কবিগুরুর প্রথম পদার্পণের কথাটি দেয়ালের এক ফলকে লেখা রয়েছে। তবে কবি এই অতিথি ভবনের যে বাগানে বসে শেষের কবিতার পাণ্ডুলিপি রচনা করেছিলেন, সেই স্মৃতি রক্ষার্থে বাগানে রাখা প্রস্তর ফলকটি আর আজ নেই। ওই ফলকে লেখা ছিল ‘এই জায়গায় বসে কবিগুরু শেষের কবিতা রচনা করেছিলেন।’
১৯২৮ সালের জুন মাস নাগাদ কবিগুরু ফের বেঙ্গালুরুতে আসেন। ওঠেন এই অতিথি ভবনেই। সেবার তিনি এসেছিলেন সুপণ্ডিত বন্ধুবর মহীশূর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। ব্রজেন্দ্রনাথ শীলের আমন্ত্রণে। কবিগুরু সেবার ছিলেন সপ্তাহ তিনেক। ওই সময়ই রচনা করেন শেষের কবিতা। আর সেই পাণ্ডুলিপি পড়েও শোনান ব্রজেন্দ্রনাথ শীলসহ অন্যদের। রবীন্দ্র রচনাবলির শেষের কবিতার শেষে রচনা কালের সময়সূচিতে লেখা আছে ব্যালাব্রুয়ি বাঙ্গালোর/২৫ জুলাই, ১৯২৮। সত্যিকথা কি বেঙ্গালুরুর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং মেঘালয়ের রাজধানী শিলংয়ের প্রাকৃতিক শোভাই কবিগুরুকে অনুপ্রাণিত করেছিল শেষের কবিতা লিখতে। যদিও শেষের কবিতায় ঠাঁই পেয়েছে শিলংই।
সত্তরের দশকে কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন দেবরাজ আর্শ। তাঁর আমলে বেলাব্রুয়ির বাগানবাড়ি নতুনরূপে সাজানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়। আর তখনই বাগানে থাকা শেষের কবিতা লেখার স্মৃতিবাহী স্মারকটি তুলে নেওয়া হয়। তখন অবশ্য কবিগুরু যে কক্ষে ছিলেন সেই কক্ষটিকে নতুন রূপে সাজানো হয়। কবির শয়নকক্ষটি হয়ে যায় অতিথিদের বিশ্রামঘর।
১৯৮২ সাল নাগাদ কর্ণাটকের রাজ্যপাল ছিলেন অশোকনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়। ওই সময় অশোক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সহধর্মিণী সুব্রতা বন্দ্যোপাধ্যায় খোঁজ পান কবিগুরুর শেষের কবিতা লেখার সেই ঐতিহাসিক স্মৃতিফলকের। তিনি উদ্যোগ নেন এটি বেলাব্রুয়ির সেই বাগানে স্থাপনের। কিন্তু সুব্রতা মুখোপাধ্যায়ের আকস্মিক প্রয়াণ এবং অশোক বন্দ্যোপাধ্যায়ের অবসর গ্রহণে থেমে যায় সেই প্রস্তর ফলক স্থাপনের প্রক্রিয়া। কালক্রমে সেই ফলকটিও উধাও হয়ে যায়।
ইতিমধ্যে বেঙ্গালুরু ও কলকাতার রবীন্দ্রভক্তরা কর্ণাটক সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছেন, কবিগুরুর শেষের কবিতার আঁতুড়ঘরকে রক্ষা করার। আবেদনে বলা হয়েছে, কবিগুরুর স্মৃতিবাহী ঐতিহাসিক কক্ষটিকে সংরক্ষিত করা হোক। আর বাগানের যেখানে বসে কবিগুরু শেষের কবিতার পাণ্ডুলিপি রচনা করেছিলেন সেই স্থানে বসানো হোক একটি স্মৃতিফলক। কবিগুরুর সার্ধশত জন্মবর্ষে এই দাবি ওঠে কলকাতার রবীন্দ্রভক্তদের। কর্ণাটক সরকার বিশ্ববরেণ্য কবির স্মৃতিরক্ষার্থে এই দাবি না মানলে হয়তো ইতিহাসের পাতা থেকে উঠে যাবে কবিগুরুর শেষের কবিতা লেখার আঁতুড়ঘরের ইতিহাস।
অমর সাহা
কলকাতা
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন