মাহফুজুর রহমান মানিক
স্যার, আমাদের ক্ষমা করবেন না। জাতির সন্তানদের শিশুকালে পড়িয়ে খেদমত করে গেছেন স্যার। চাহিদামাফিক খাদ্য, পোশাক কিংবা বাসস্থানের অভাব হলেও আপনার দায়িত্বে এতটুকু কার্পণ্য করেননি। কিন্তু যখন আপনাদের দিন চলছে না; যখন আপনাদের পেটের সঙ্গে পিঠ লেগে গেছে; যখন আপনাদের অবস্থা, আপনাদের নূ্যনতম চাহিদা সমাজ বুঝতে চেষ্টা করেনি; যখন আপনারা রাজপথে নামতে বাধ্য হলেন; যখন আপনারা প্রয়োজন বোঝাতে চেষ্টা করলেন; যখন আপনারা সরকারকে জীবন বাঁচানোর প্রয়োজনীয় দাবি জানানোর চেষ্টা করলেন_ আপনাদের আমরা তো সহযোগিতা করিইনি, উল্টো লাঠিপেটা করেছি, জলকামান দাগিয়েছি এবং অবশেষে আপনাকে লাশ পর্যন্ত করেছি। স্যার, এ যে ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ।
আমাদের ক্ষমা করবেন না, স্যার।
কেন ক্ষমা করবেন স্যার, আপনারা তো কোনো অযৌক্তিক আন্দোলন করেননি। আপনাদের কেবল এক দফা আন্দোলন : চাকরি জাতীয়করণ। বেসরকারি শিক্ষক হিসেবে মাসে চার হাজার নয়শ' টাকা দিয়ে তো আপনাদের চলার কথা নয়। সরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ৯ হাজার টাকা পেলে আপনারা পাবেন না কেন; যেখানে উভয়ের মান সমান, শিক্ষকদের যোগ্যতা সমান, বিদ্যালয়গুলোর ফলাফলও সমান_ সেখানে এই বৈষম্য তো মেনে নেওয়ার নয়। সবচেয়ে বড় কথা হলো স্যার, আপনারা এতদিন ধরে আন্দোলন করছেন, নানাভাবে সরকার আপনাদের আশ্বস্তও করেছে কিন্তু বাস্তবে কিছুই হয়নি। ২০১০-এ আন্দোলন করেছেন; শিক্ষামন্ত্রী দাবি বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। ২০১২-এর প্রথমদিকে বিদ্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে ধর্মঘট করেছেন; তাতে প্রতিশ্রুতির পরও তা হয়নি।
কীভাবে ক্ষমা করবেন স্যার? ১৫ এপ্রিল আপনারা কোনো বিশৃঙ্খলা করতে চাননি। আপনারা কেবল প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলেন; কেবল তার কাছে স্মারকলিপি পেশ করতে চেয়েছিলেন; এটা তো আপনাদের গণতান্ত্রিক অধিকার। জবাবে পুলিশের হাতে লাঞ্ছিত হয়েছিলেন আপনারা। যে পুলিশের লাঠিপেটায় আপনারা আহত হয়েছেন, সে পুলিশ একদিন আপনাদের ছাত্র ছিল। অথচ এরা আপনাকে সম্মান দিতে জানেনি।
ক্ষমা তো এত সহজ নয়, স্যার। আপনারা এতদিন ধরে আন্দোলন করছেন অথচ আশ্বাস ছাড়া কোনো ফল পাচ্ছেন না, এটা কীভাবে সম্ভব। আপনার লাশ হওয়ার মধ্য দিয়ে আরেকটা আশ্বাস পাওয়া গেল, যার মাধ্যমে এই দফায়ও প্রাথমিক শিক্ষকরা অবস্থান ধর্মঘট প্রত্যাহার করেছেন। এখন আসলে এই আশ্বাসের বাস্তবতা দেখার জন্য অপেক্ষা করা ছাড়া কোনো পথ নেই। তবে সরকার ২০১৪ সালের মধ্যে নিরক্ষরতামুক্ত বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখছে, ২০১৫ সালের মধ্যে সবার জন্য শিক্ষা নিশ্চিত করার কথা বলছে আর প্রাথমিক শিক্ষার ঝরে পড়ার হারও কমানোর কথা বলছে। সবচেয়ে বড় কথা হলো, প্রাথমিক শিক্ষার সর্বকালের রেকর্ড বাজেট নিয়ে পিইডিপি-৩ বাস্তবায়নের পথে। এতসব স্বপ্ন আর পরিকল্পনার গোড়ায় রয়েছেন আপনারা শিক্ষকরা। অথচ আপনাদের বিষয়ে সরকারের কোনো মাথাব্যথা নেই।
স্যার, আপনি চলে গেছেন। আপনার চলে যাওয়া নিশ্চয়ই প্রাথমিক শিক্ষকদের আন্দোলনের একটা রসদ হবে এবং হয়তো আপনাদের চাকরিটা জাতীয়করণও হবে কিন্তু কিছুই আপনি দেখে যেতে পারেননি। আপনি মুক্তিযুদ্ধ করেছেন, আপনাকে জাতি সম্মান দিতে পারেনি। আপনার মৃত্যুর জন্য আমরাই দায়ী। আপনি আমাদের ক্ষমা করবেন না। কারণ আমাদের লজ্জা নেই, আমাদের বিবেক ভোঁতা হয়ে গেছে। আপনার মৃত্যুর মতো এ রকম অস্বাভাবিক বিষয় আমাদের কাছে এতটা সহজ হয়ে গেছে যে আমাদের হৃদয় বলতে কিছু নেই। আমাদের ক্ষমা করবেন না স্যার।
mahfuz.manik@gmail.com
আমাদের ক্ষমা করবেন না, স্যার।
কেন ক্ষমা করবেন স্যার, আপনারা তো কোনো অযৌক্তিক আন্দোলন করেননি। আপনাদের কেবল এক দফা আন্দোলন : চাকরি জাতীয়করণ। বেসরকারি শিক্ষক হিসেবে মাসে চার হাজার নয়শ' টাকা দিয়ে তো আপনাদের চলার কথা নয়। সরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ৯ হাজার টাকা পেলে আপনারা পাবেন না কেন; যেখানে উভয়ের মান সমান, শিক্ষকদের যোগ্যতা সমান, বিদ্যালয়গুলোর ফলাফলও সমান_ সেখানে এই বৈষম্য তো মেনে নেওয়ার নয়। সবচেয়ে বড় কথা হলো স্যার, আপনারা এতদিন ধরে আন্দোলন করছেন, নানাভাবে সরকার আপনাদের আশ্বস্তও করেছে কিন্তু বাস্তবে কিছুই হয়নি। ২০১০-এ আন্দোলন করেছেন; শিক্ষামন্ত্রী দাবি বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। ২০১২-এর প্রথমদিকে বিদ্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে ধর্মঘট করেছেন; তাতে প্রতিশ্রুতির পরও তা হয়নি।
কীভাবে ক্ষমা করবেন স্যার? ১৫ এপ্রিল আপনারা কোনো বিশৃঙ্খলা করতে চাননি। আপনারা কেবল প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলেন; কেবল তার কাছে স্মারকলিপি পেশ করতে চেয়েছিলেন; এটা তো আপনাদের গণতান্ত্রিক অধিকার। জবাবে পুলিশের হাতে লাঞ্ছিত হয়েছিলেন আপনারা। যে পুলিশের লাঠিপেটায় আপনারা আহত হয়েছেন, সে পুলিশ একদিন আপনাদের ছাত্র ছিল। অথচ এরা আপনাকে সম্মান দিতে জানেনি।
ক্ষমা তো এত সহজ নয়, স্যার। আপনারা এতদিন ধরে আন্দোলন করছেন অথচ আশ্বাস ছাড়া কোনো ফল পাচ্ছেন না, এটা কীভাবে সম্ভব। আপনার লাশ হওয়ার মধ্য দিয়ে আরেকটা আশ্বাস পাওয়া গেল, যার মাধ্যমে এই দফায়ও প্রাথমিক শিক্ষকরা অবস্থান ধর্মঘট প্রত্যাহার করেছেন। এখন আসলে এই আশ্বাসের বাস্তবতা দেখার জন্য অপেক্ষা করা ছাড়া কোনো পথ নেই। তবে সরকার ২০১৪ সালের মধ্যে নিরক্ষরতামুক্ত বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখছে, ২০১৫ সালের মধ্যে সবার জন্য শিক্ষা নিশ্চিত করার কথা বলছে আর প্রাথমিক শিক্ষার ঝরে পড়ার হারও কমানোর কথা বলছে। সবচেয়ে বড় কথা হলো, প্রাথমিক শিক্ষার সর্বকালের রেকর্ড বাজেট নিয়ে পিইডিপি-৩ বাস্তবায়নের পথে। এতসব স্বপ্ন আর পরিকল্পনার গোড়ায় রয়েছেন আপনারা শিক্ষকরা। অথচ আপনাদের বিষয়ে সরকারের কোনো মাথাব্যথা নেই।
স্যার, আপনি চলে গেছেন। আপনার চলে যাওয়া নিশ্চয়ই প্রাথমিক শিক্ষকদের আন্দোলনের একটা রসদ হবে এবং হয়তো আপনাদের চাকরিটা জাতীয়করণও হবে কিন্তু কিছুই আপনি দেখে যেতে পারেননি। আপনি মুক্তিযুদ্ধ করেছেন, আপনাকে জাতি সম্মান দিতে পারেনি। আপনার মৃত্যুর জন্য আমরাই দায়ী। আপনি আমাদের ক্ষমা করবেন না। কারণ আমাদের লজ্জা নেই, আমাদের বিবেক ভোঁতা হয়ে গেছে। আপনার মৃত্যুর মতো এ রকম অস্বাভাবিক বিষয় আমাদের কাছে এতটা সহজ হয়ে গেছে যে আমাদের হৃদয় বলতে কিছু নেই। আমাদের ক্ষমা করবেন না স্যার।
mahfuz.manik@gmail.com
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন